ঢাকা ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঠাণ্ডাত হ্যামরা মরি গৈইনো বাহে

মোঃ রফিকুল ইসলাম রাফিক, গাইবান্ধা

কাপাসিয়া চরের ৭০ বছর বয়েসের আনছার আলী জানান, “ঠাণ্ডাত হ্যামরা মরি গৈইনো বাহে। কেডা হ্যামাক ঠাণ্ডার কাপড় দিবে। ভোট আইলে সবাই এটা দিবে, সেটা দিবে কইয়া ভোট নিয়ে যায়, এখন হ্যামরা ঠাণ্ডাত মরি কারো দেখা পাও না। আজ কইদিন থাকি আগুন জ্বলেয়া ছাওয়াল পোয়াল বাড়িওয়ালীকে নিয়ে কষ্ট করি রাত দিন পার করছি।

চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশা, কন কনে ঠাণ্ডা ও শৈত প্রবাহের কারনে অসহায় ও ছিন্নমুল পরিবারগুলো কাবু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের অস্থায়ী পরিবারগুলো ঠাণ্ডায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সকল কার্যক্রম। ঘন কুয়াশা এবং ঠাণ্ডায় অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ীরা যথানিয়মে কর্মস্থলে যেতে পারছে না। যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। ঠাণ্ডার কারনে নানাবিধ রোগব্যধির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, ওষুধের দোকানগুলো রোগির ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

উপজেলা সমাজসেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫০ হাজার ছিন্নমুল পরিবার রয়েছে। নিম্ন আয়ের এই পরিবারগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে অসহনীয় ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিমান একেবারেই অপ্রতুল। চলতি মৌসুমে সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। চরের ছিন্নমূল পরিবারগুলো খড় কুঁটো জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা নিবারণ করছে। বিশেষ করে বৃদ্ধা-বৃদ্ধা, শিশু ও প্রসূতি মায়েরা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। হরিপুর ডাঙ্গার চরের সোলেমান মিয়া জানান, গত কয়দিনের ঠাণ্ডায় চরের মানুষের অনেক কষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে বয়বৃদ্ধ, শিশু ও গর্ভবতি মা’দের কষ্ট হয়েছে। এখন পর্যন্ত পর্যন্ত কোন প্রকার শীতবস্ত্র পাই নাই। ঠাণ্ডার কারনে কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। অনেকে বাড়ির মধ্যে খড় কুটো জ্বালিয়ে বসবাস করছে।

তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। তার ইউনিয়নে ছিন্নমুল মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ৮ হাজার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে কিছু শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে, তা এখনো বিতরণ করা হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সুবর্না ইসলাম জানান, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারনে হাপানি, এ্যজমা, নিমোনিয়া, পেটের পীড়া, সর্দি কাশিসহ নানাবিধ রোগীর সংখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। মুলত ঠাণ্ডার কারণে এসব রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু, ও প্রসূতি মায়েরা বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

আপলোডকারীর তথ্য

ঠাণ্ডাত হ্যামরা মরি গৈইনো বাহে

আপডেট সময় ০৩:৩৪:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩

মোঃ রফিকুল ইসলাম রাফিক, গাইবান্ধা

কাপাসিয়া চরের ৭০ বছর বয়েসের আনছার আলী জানান, “ঠাণ্ডাত হ্যামরা মরি গৈইনো বাহে। কেডা হ্যামাক ঠাণ্ডার কাপড় দিবে। ভোট আইলে সবাই এটা দিবে, সেটা দিবে কইয়া ভোট নিয়ে যায়, এখন হ্যামরা ঠাণ্ডাত মরি কারো দেখা পাও না। আজ কইদিন থাকি আগুন জ্বলেয়া ছাওয়াল পোয়াল বাড়িওয়ালীকে নিয়ে কষ্ট করি রাত দিন পার করছি।

চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশা, কন কনে ঠাণ্ডা ও শৈত প্রবাহের কারনে অসহায় ও ছিন্নমুল পরিবারগুলো কাবু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের অস্থায়ী পরিবারগুলো ঠাণ্ডায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সকল কার্যক্রম। ঘন কুয়াশা এবং ঠাণ্ডায় অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ীরা যথানিয়মে কর্মস্থলে যেতে পারছে না। যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। ঠাণ্ডার কারনে নানাবিধ রোগব্যধির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, ওষুধের দোকানগুলো রোগির ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

উপজেলা সমাজসেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫০ হাজার ছিন্নমুল পরিবার রয়েছে। নিম্ন আয়ের এই পরিবারগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে অসহনীয় ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিমান একেবারেই অপ্রতুল। চলতি মৌসুমে সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। চরের ছিন্নমূল পরিবারগুলো খড় কুঁটো জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা নিবারণ করছে। বিশেষ করে বৃদ্ধা-বৃদ্ধা, শিশু ও প্রসূতি মায়েরা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। হরিপুর ডাঙ্গার চরের সোলেমান মিয়া জানান, গত কয়দিনের ঠাণ্ডায় চরের মানুষের অনেক কষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে বয়বৃদ্ধ, শিশু ও গর্ভবতি মা’দের কষ্ট হয়েছে। এখন পর্যন্ত পর্যন্ত কোন প্রকার শীতবস্ত্র পাই নাই। ঠাণ্ডার কারনে কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। অনেকে বাড়ির মধ্যে খড় কুটো জ্বালিয়ে বসবাস করছে।

তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। তার ইউনিয়নে ছিন্নমুল মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ৮ হাজার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে কিছু শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে, তা এখনো বিতরণ করা হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সুবর্না ইসলাম জানান, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারনে হাপানি, এ্যজমা, নিমোনিয়া, পেটের পীড়া, সর্দি কাশিসহ নানাবিধ রোগীর সংখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। মুলত ঠাণ্ডার কারণে এসব রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু, ও প্রসূতি মায়েরা বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।