ঢাকা ০২:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটে গ্রীষ্মের বিদায়, এসেছে শীত, রস সংগ্রহে ব্যাস্ত গাছি

অতনু চৌধুরী রাজু, বাগেরহাট

গ্রীস্মের বিদায় জানিয়ে শীত এসেছে।শুরু হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ তোলার কাজ। সারা দেশের ন্যায় তাই যেন দক্ষিণ জনপদের বাগেরহাট জেলার প্রতিটিটা এলাকার গাছিরাও বসে নেই, তারা প্রতিটি মুহূর্ত রস সংগ্রহের কাজে ব্যাস্ত রয়েছেন।

বাগেরহাট জেলার প্রতিটিটা এলাকায় বর্তমানে মাছে সমৃদ্ধশালী।ফসলী জমির সিংহভাগ এখন মাছ চাষীদের দখলে। এক সময় এলাকায় লক্ষ লক্ষ খেজুর গাছ থাকলেও আজ তার সংখ্যা অনেকটা কম, তার পরেও যে একেবারে কম তা ঠিক নয়। যে গাছগুলো রয়েছে সেগুলোর পরিচর্যা করতেই যেন হিমশিম খাচ্ছেন গাছিরা।যারা গাছ কাটে তাদের বলা হয় গাছি।খেজুর গাছের অগ্রভাগের একটি নির্দিষ্ট অংশ চিরে বিশেষ ব্যবস্থায় ছোট কলসি (ভাড়/ঠিলে) বাঁধা হয়।ফোঁটায় ফোঁটায় রসে পূর্ণ হয় সে কলসি।তাই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে গাছ তোলা কাটাসহ বিভিন্ন রকমের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়েই তোলা কাটা করতে হয়। কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে গাছ তোলার কাজ করতে হয়। খেজুর গাছের চাহিদাটা ইট ভাটায় বেশী ও ফসলী জমির একটা মোটাংশ লীজ ঘের হওয়ায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকাংশে কম।তাই যেন খেজুর গাছে বিলুপ্তির সুর বাজছে। তাই আগের মতো মাঠও নেই,নেই সারি – সারি এই খেজুর গাছও। তারপরও গ্রামের মাঠে আর গ্রাম্য মেঠো পথের ধারে কতক গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে।অনুসন্ধানে দেখা যায়, আমাদের গ্রাম বাংলায় অতীতে খেজুর রসের যে সুখ্যাতি ছিল তা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। খেজুরের রস শীতের সকালে বসে মুড়ি মিশিয়ে গ্লাস ভরে খেতে বেশ মজা লাগে। সন্ধ্যা রস আরো মজাদার।বেশ লোভণীয় নলেন পাটালি ও গুড়। খেজুর গুড় বাঙালীর সংস্কৃতির একটা অঙ্গ।ক’দিন পরেই প্রতিটি ঘরে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা পুলি পায়েস তৈরীর ধূম পড়বে। ঢেঁকি ঘরে চাল কুটার ধুম পড়ে যাবে,শোনা যাবে ঢেকির ঢক ঢক শব্দ। মুড়ি, চিড়া, পিঠা খাওয়া কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সবার বাছে বেশ প্রিয়।এসব আশা নিয়ে শীত মৌসুমে গাছ কাটার কাজে গাছিদের বেশ ব্যস্ত সময় পার হয়।দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক হাজার গাছির সারা বছরের রুজিরুটির নির্ভর করে এ পেশার উপর।

এ বিষয়ে মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের দওেরমেঠ এলাকার গাছি অশোক মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শীত আসা মাত্রই আমরা খেজুর গাছ ছিলানোর জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লেগেই আছি।

এ বিষয়ে রামপাল উপজেলার ফুলপুকুর গাছি প্ররিমল মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ মাস খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে বেশ আর্থিক সচ্ছলতা আসে আমাদের। খেজুর গাছ তোলার মৌসুম এলে তাদের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। নিজেদের প্রয়োজনীয় খাবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বিক্রি করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে চলে পুরো বছর। এখনো শীত জেঁকে না বসলেও গাছিরা গাছ কাটার জন্য দা তৈরী, ঠুঙি,দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়/ঠিলে) কেনার কাজ সেরে নিচ্ছেন। আগের মতো খেজুর গাছ আর নেই।এরপরও গাছিরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আপলোডকারীর তথ্য

বাগেরহাটে গ্রীষ্মের বিদায়, এসেছে শীত, রস সংগ্রহে ব্যাস্ত গাছি

আপডেট সময় ০৮:১৯:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

অতনু চৌধুরী রাজু, বাগেরহাট

গ্রীস্মের বিদায় জানিয়ে শীত এসেছে।শুরু হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ তোলার কাজ। সারা দেশের ন্যায় তাই যেন দক্ষিণ জনপদের বাগেরহাট জেলার প্রতিটিটা এলাকার গাছিরাও বসে নেই, তারা প্রতিটি মুহূর্ত রস সংগ্রহের কাজে ব্যাস্ত রয়েছেন।

বাগেরহাট জেলার প্রতিটিটা এলাকায় বর্তমানে মাছে সমৃদ্ধশালী।ফসলী জমির সিংহভাগ এখন মাছ চাষীদের দখলে। এক সময় এলাকায় লক্ষ লক্ষ খেজুর গাছ থাকলেও আজ তার সংখ্যা অনেকটা কম, তার পরেও যে একেবারে কম তা ঠিক নয়। যে গাছগুলো রয়েছে সেগুলোর পরিচর্যা করতেই যেন হিমশিম খাচ্ছেন গাছিরা।যারা গাছ কাটে তাদের বলা হয় গাছি।খেজুর গাছের অগ্রভাগের একটি নির্দিষ্ট অংশ চিরে বিশেষ ব্যবস্থায় ছোট কলসি (ভাড়/ঠিলে) বাঁধা হয়।ফোঁটায় ফোঁটায় রসে পূর্ণ হয় সে কলসি।তাই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে গাছ তোলা কাটাসহ বিভিন্ন রকমের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়েই তোলা কাটা করতে হয়। কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে গাছ তোলার কাজ করতে হয়। খেজুর গাছের চাহিদাটা ইট ভাটায় বেশী ও ফসলী জমির একটা মোটাংশ লীজ ঘের হওয়ায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকাংশে কম।তাই যেন খেজুর গাছে বিলুপ্তির সুর বাজছে। তাই আগের মতো মাঠও নেই,নেই সারি – সারি এই খেজুর গাছও। তারপরও গ্রামের মাঠে আর গ্রাম্য মেঠো পথের ধারে কতক গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে।অনুসন্ধানে দেখা যায়, আমাদের গ্রাম বাংলায় অতীতে খেজুর রসের যে সুখ্যাতি ছিল তা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। খেজুরের রস শীতের সকালে বসে মুড়ি মিশিয়ে গ্লাস ভরে খেতে বেশ মজা লাগে। সন্ধ্যা রস আরো মজাদার।বেশ লোভণীয় নলেন পাটালি ও গুড়। খেজুর গুড় বাঙালীর সংস্কৃতির একটা অঙ্গ।ক’দিন পরেই প্রতিটি ঘরে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা পুলি পায়েস তৈরীর ধূম পড়বে। ঢেঁকি ঘরে চাল কুটার ধুম পড়ে যাবে,শোনা যাবে ঢেকির ঢক ঢক শব্দ। মুড়ি, চিড়া, পিঠা খাওয়া কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সবার বাছে বেশ প্রিয়।এসব আশা নিয়ে শীত মৌসুমে গাছ কাটার কাজে গাছিদের বেশ ব্যস্ত সময় পার হয়।দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক হাজার গাছির সারা বছরের রুজিরুটির নির্ভর করে এ পেশার উপর।

এ বিষয়ে মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের দওেরমেঠ এলাকার গাছি অশোক মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শীত আসা মাত্রই আমরা খেজুর গাছ ছিলানোর জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লেগেই আছি।

এ বিষয়ে রামপাল উপজেলার ফুলপুকুর গাছি প্ররিমল মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ মাস খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে বেশ আর্থিক সচ্ছলতা আসে আমাদের। খেজুর গাছ তোলার মৌসুম এলে তাদের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। নিজেদের প্রয়োজনীয় খাবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বিক্রি করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে চলে পুরো বছর। এখনো শীত জেঁকে না বসলেও গাছিরা গাছ কাটার জন্য দা তৈরী, ঠুঙি,দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়/ঠিলে) কেনার কাজ সেরে নিচ্ছেন। আগের মতো খেজুর গাছ আর নেই।এরপরও গাছিরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।