ঢাকা ০২:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞান ও ধর্ম: বিবর্তন-বিতর্ক ও আদিম জীবন কণা

সাম্প্রতিক কালে মানব বিবর্তন, বিতর্ক চায়ের আড্ডায় বেশ সমালোচনার ঝড় তুলেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী অ্যান্টি মোল্লা শ্রেণী ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের খাদক অতি প্রাকৃতিক বুদ্ধিজীবীগণ, পাশাপাশি মোল্লা শ্রেণী তথা মাদ্রাসা পড়ুয়া অতি উৎসাহী একশ্রেণীর হুজুর, মাওলানা, পীর কামেলগণ যেভাবে অবলীলায় অন্ধকারে অজ্ঞতার ঢিল ছুঁড়ছেন, এতে করে অতি উৎসাহী অ্যান্টি মোল্লা শ্রেণীদের ছাপিয়ে দেওয়া প্রাকৃতিক নির্বাচন বা মানব বিবর্তনবাদ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার পথ আরো সহজতর হচ্ছে।
এই শ্রেণীগোষ্ঠী অতি সুকৌশলে কোমলমতি শিশুদের মস্তিষ্কে মানব বিবর্তনীয় পঁচা দূর্গন্ধময় তত্ত্বের স্হায়ী রূপ দিতে যে অশুভ চক্রান্ত করছে, তা প্রতিহত করার একমাত্র পন্হা আল-কোরআন এ উল্লেখিত আদম সৃষ্টি তত্ত্বের যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আত্মনিয়োগ ও যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যা প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন ওয়াজ নছিয়ত আন্টি মোল্লা শ্রেণীদেরকে আরো উৎসাহিত করবে।
আদম সৃষ্টি তত্ত্বে মহান সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন প্রকার মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ পোড়ামাটির ন্যায় বস্তু বা কাদা বা এঁটেল মাটি দ্বারা একটি মুর্তিময় আদম তৈরি করে শরীরে রূহ ফুকে দেয়া মাত্রই আদম জীবন্ত রূপ ধারণ করলো। এই ধরণের অজ্ঞতা প্রসূত জ্ঞান চর্চা বিজ্ঞানের সাথে চরম সাংঘর্ষিক।
মহাবিশ্বে সকল শ্রেণীর জীবন কাঠামো কার্বন ভিত্তিক, আদি পিতা আদমের দেহ কাঠামো ঐ একই উপাদান দ্বারা গঠিত হয়ে থাকবে। মাটি থেকে আদম সৃষ্টির তত্ত্বগত ফলাফল সিলিকন ভিত্তিক দেহ কাঠামোকে প্রতিষ্ঠা করে। এটি অবাস্তব এবং এক অর্থে অবৈজ্ঞানিক। কাদামাটি মুলত সিলিকন যৌগ, তাহলে মাটি থেকে আদম সৃষ্টি কিরূপে সম্ভব হতে পারে? উত্তরে অন্ধকারে ঢিল ছূড়ে দেয়ার মতই। সৃষ্টিকর্তার অমীয় বাণীর উপর আস্থা ও বিশ্বাস। অন্যথা ঈমান চ্যুতি হওয়ার সমুহ আশংকা। বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ পূর্বক আদম মুর্তি তৈরি করে মহান রব বললেন ‘হয়ে যাও’ অমনি দেহ কাঠামো সিলিকন ভিত্তিক গঠনের পরিবর্তে কার্বন ভিত্তিক আদমের জীবন্ত রূপ ধারণ করলো, এটি কি করে সম্ভব? আল্লাহ তার সৃষ্টিতে কোনোরূপ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন না, তিনি বিজ্ঞানময় কোরানের শপথ করেছেন। সুতরাং বিজ্ঞান দিয়েই সকল প্রকার সৃষ্টি সংক্রান্ত উদ্ভূত সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির মহাপরিকল্পনার কথা তাঁরই সৃষ্ট ফেরেশতাদের সম্মুখে উত্থাপন করলেন। সৃষ্টির বিবর্তন ধারায় মহাকাশে ফরমালডিহাইড ও এমোনিয়া সমৃদ্ধকরণের ফলে জীবন সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। তারকারাজি সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে মহাবিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধুলিবালি (Dust) সমূহ মহাকর্ষ বলের আকর্ষণে কেন্দ্রীভূত হয়ে গ্রহ ও গ্রহাণুপুঞ্জ গঠিত হয়। এরমধ্যে কিছু গ্রহাণুপুঞ্জ কার্বন ও জলকণা দ্বারা সমৃদ্ধকরণ হয়, এই ধরনের গ্রহাণুপুঞ্জ কে বলা হয় কার্বনাসিয়াস কন্ড্রাইট। কঠিন শিলায় রূপান্তরিত কার্বনাসিয়াস কন্ড্রাইট মুলত ধূলি কণার ম্যাট্রিক্স। এতে বৈচিত্রময় জীবন সৃষ্টির অপরিহার্য অনু ডিএনএ গঠনের মৌলিক গাঠনিক উপাদান নিউক্লিক অ্যাসিড ও জলকণা খুঁজে পাওয়া যায়। কার্বন সমৃদ্ধ এই বিশেষ ধরনের ধূলিকণা থেকে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আল কুরআনে উল্লেখিত বিশেষ ধরনের মাটি বা ধুলি কণা থেকেই প্রাণবন্ত জীবন সৃষ্টির সুচনা করেন। শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ছাড়াই বিশেষ প্রক্রিয়ায় গবেষণাগারে আদমের ডিএনএ সৃষ্টি করে উপযোগী পরিবেশে শিশু আদম জম্ম গ্রহণ করে, পরবর্তীতে মহাকাশে পৃথিবীর অনুরূপ অন্য কোন গ্রহে আদমের বেড়ে ওঠা ও কালের বিবর্তন ধারায় বৈচিত্র্যময় পৃথিবী নামক গ্রহে স্হানান্তরিত হয়।
অন্যান্য জীবের ক্ষেত্রে বিবর্তন ধারা অনুসৃত হলেও আমাদের ক্ষেত্রে তা অনুসৃত হয়নি। আমরা মুলত মাইগ্রেটেড জাতি, পৃথিবীতে আমাদের অবতরণ হয়েছে অন্য কোন পাথুরে গ্রহ থেকে।
ডারউইন তত্ত্ববিদদের ধারণা অনুযায়ী প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বানর থেকে ধীরে ধীরে ভিন্ন প্রজাতির মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল। এইরূপ কল্পনাপ্রসূত ভ্রান্ত তত্ত্ব ইতিমধ্যে আধুনিক বিজ্ঞান সমাজে প্রত্যাখাত হয়েছে।
অনুরূপ মাটি থেকে মূর্তিময় আদম সৃষ্টির প্রচলিত ব্যাখ্যা অবৈজ্ঞানিক ও উদ্ভট। মোল্লা ও অ্যান্টি মোল্লা উভয়ই শ্রেণী আপাতত: প্রশান্তচিত্তে নিন্দ্রিত থাকুক, কালের বিবর্তন ধারায় মানবের আবির্ভাব পৃথিবীতে কিভাবে সূচিত হয়েছিল, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অচিরেই প্রকৃত ইতিহাস আমরা জানতে পারবো এবং ধর্ম ও বিজ্ঞান অন্ধত্বের উপর বিজয়ী হবে।
নিষিক্ত ডিম্বানু-শুক্রাণু ছাড়াই আদমকে যেভাবে সৃষ্টি করা হলো, অনুরূপ গবেষণায় সাফল্য অর্জন করে ইসরাইল ইউজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা।
১৪ আগষ্ট ২০২২ যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরা হল-
সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা পুরুষ ও স্ত্রীর যৌনমিলন ছাড়াই সেল থেকে কৃত্রিম উপায়ে ভ্রূণ তৈরি করলো-
নিষিক্ত ডিম্বানু-শুক্রাণু ছাড়াই তৈরি হলো পৃথিবীর প্রথম ভ্রূণ। এমন অসাধ্য সাধন করল ইসরাইল ইউজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা।
মা-বাবা বা কোনো নিষিক্ত ডিম্বাণু শুক্রাণু ছাড়াই কেবল স্টেম সেল (মূল কোষ) ব্যবহার করে ইঁদুরের ভ্রূণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটিকে যুগান্তকারী সাফল্য বলছেন বিশ্লেষকরা। ‘অ্যাসিটেড রিপ্রোডাকশন টেকনোলজি’ পদ্ধতিতে তৈরি হলো নিষিক্ত ডিম্বাণু-শুক্রাণু ছাড়া শুধুমাত্র সেল থেকে পৃথিবীর প্রথম ভ্রূণ।
পুরুষ ও স্ত্রীর যৌনমিলন ছাড়াই সেল থেকে কৃত্রিম উপায়ে ভ্রূণ তৈরি এক প্রকারে প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করা।
প্রকৃতিকে এড়িয়ে কৃত্রিম উপায়ে মানুষ তৈরি করা কতটা নৈতিক, সে বিষয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। তবু বিজ্ঞানের নিরিখে এই আবিষ্কার অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায় যে,
মানুষ কতৃক ‘মানুষ’ তৈরি আজ হাতের মুঠোয় চলে এসেছে, প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যতিরেকে আধুনিক মানব সৃষ্টি স্বয়ং আল্লাহ তাআলার পক্ষে অতীব সহজ কাজ নয় কি? প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতে বিবর্তনীয় ধারার অনুসরণ আল কোরআন দ্বারা সমর্থিত, তবে সেটি ১৪০০ সিসি মস্তিষ্ক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ঘটেনি, দ্বিপদী মানুষের শারীরিক গঠনাকৃতি, চিন্তাশীল দক্ষতা, ভাষা শিক্ষা ও লেখনী ক্ষমতা অর্জন সম্ভবপর হলেও অন্তত: অন্যসব প্রাণীদের পক্ষে সেটা অসম্ভব। প্রাকৃতিক নির্বাচন বা বিবর্তনবাদের মধ্য দিয়ে মানব জাতির উত্থান কল্পনা প্রসুত তত্ত্ব বৈ অন্য কিছু নহে।

আপলোডকারীর তথ্য

বিজ্ঞান ও ধর্ম: বিবর্তন-বিতর্ক ও আদিম জীবন কণা

আপডেট সময় ০৪:২৪:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩

সাম্প্রতিক কালে মানব বিবর্তন, বিতর্ক চায়ের আড্ডায় বেশ সমালোচনার ঝড় তুলেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী অ্যান্টি মোল্লা শ্রেণী ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের খাদক অতি প্রাকৃতিক বুদ্ধিজীবীগণ, পাশাপাশি মোল্লা শ্রেণী তথা মাদ্রাসা পড়ুয়া অতি উৎসাহী একশ্রেণীর হুজুর, মাওলানা, পীর কামেলগণ যেভাবে অবলীলায় অন্ধকারে অজ্ঞতার ঢিল ছুঁড়ছেন, এতে করে অতি উৎসাহী অ্যান্টি মোল্লা শ্রেণীদের ছাপিয়ে দেওয়া প্রাকৃতিক নির্বাচন বা মানব বিবর্তনবাদ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার পথ আরো সহজতর হচ্ছে।
এই শ্রেণীগোষ্ঠী অতি সুকৌশলে কোমলমতি শিশুদের মস্তিষ্কে মানব বিবর্তনীয় পঁচা দূর্গন্ধময় তত্ত্বের স্হায়ী রূপ দিতে যে অশুভ চক্রান্ত করছে, তা প্রতিহত করার একমাত্র পন্হা আল-কোরআন এ উল্লেখিত আদম সৃষ্টি তত্ত্বের যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আত্মনিয়োগ ও যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যা প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন ওয়াজ নছিয়ত আন্টি মোল্লা শ্রেণীদেরকে আরো উৎসাহিত করবে।
আদম সৃষ্টি তত্ত্বে মহান সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন প্রকার মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ পোড়ামাটির ন্যায় বস্তু বা কাদা বা এঁটেল মাটি দ্বারা একটি মুর্তিময় আদম তৈরি করে শরীরে রূহ ফুকে দেয়া মাত্রই আদম জীবন্ত রূপ ধারণ করলো। এই ধরণের অজ্ঞতা প্রসূত জ্ঞান চর্চা বিজ্ঞানের সাথে চরম সাংঘর্ষিক।
মহাবিশ্বে সকল শ্রেণীর জীবন কাঠামো কার্বন ভিত্তিক, আদি পিতা আদমের দেহ কাঠামো ঐ একই উপাদান দ্বারা গঠিত হয়ে থাকবে। মাটি থেকে আদম সৃষ্টির তত্ত্বগত ফলাফল সিলিকন ভিত্তিক দেহ কাঠামোকে প্রতিষ্ঠা করে। এটি অবাস্তব এবং এক অর্থে অবৈজ্ঞানিক। কাদামাটি মুলত সিলিকন যৌগ, তাহলে মাটি থেকে আদম সৃষ্টি কিরূপে সম্ভব হতে পারে? উত্তরে অন্ধকারে ঢিল ছূড়ে দেয়ার মতই। সৃষ্টিকর্তার অমীয় বাণীর উপর আস্থা ও বিশ্বাস। অন্যথা ঈমান চ্যুতি হওয়ার সমুহ আশংকা। বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ পূর্বক আদম মুর্তি তৈরি করে মহান রব বললেন ‘হয়ে যাও’ অমনি দেহ কাঠামো সিলিকন ভিত্তিক গঠনের পরিবর্তে কার্বন ভিত্তিক আদমের জীবন্ত রূপ ধারণ করলো, এটি কি করে সম্ভব? আল্লাহ তার সৃষ্টিতে কোনোরূপ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন না, তিনি বিজ্ঞানময় কোরানের শপথ করেছেন। সুতরাং বিজ্ঞান দিয়েই সকল প্রকার সৃষ্টি সংক্রান্ত উদ্ভূত সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির মহাপরিকল্পনার কথা তাঁরই সৃষ্ট ফেরেশতাদের সম্মুখে উত্থাপন করলেন। সৃষ্টির বিবর্তন ধারায় মহাকাশে ফরমালডিহাইড ও এমোনিয়া সমৃদ্ধকরণের ফলে জীবন সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। তারকারাজি সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে মহাবিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধুলিবালি (Dust) সমূহ মহাকর্ষ বলের আকর্ষণে কেন্দ্রীভূত হয়ে গ্রহ ও গ্রহাণুপুঞ্জ গঠিত হয়। এরমধ্যে কিছু গ্রহাণুপুঞ্জ কার্বন ও জলকণা দ্বারা সমৃদ্ধকরণ হয়, এই ধরনের গ্রহাণুপুঞ্জ কে বলা হয় কার্বনাসিয়াস কন্ড্রাইট। কঠিন শিলায় রূপান্তরিত কার্বনাসিয়াস কন্ড্রাইট মুলত ধূলি কণার ম্যাট্রিক্স। এতে বৈচিত্রময় জীবন সৃষ্টির অপরিহার্য অনু ডিএনএ গঠনের মৌলিক গাঠনিক উপাদান নিউক্লিক অ্যাসিড ও জলকণা খুঁজে পাওয়া যায়। কার্বন সমৃদ্ধ এই বিশেষ ধরনের ধূলিকণা থেকে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আল কুরআনে উল্লেখিত বিশেষ ধরনের মাটি বা ধুলি কণা থেকেই প্রাণবন্ত জীবন সৃষ্টির সুচনা করেন। শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ছাড়াই বিশেষ প্রক্রিয়ায় গবেষণাগারে আদমের ডিএনএ সৃষ্টি করে উপযোগী পরিবেশে শিশু আদম জম্ম গ্রহণ করে, পরবর্তীতে মহাকাশে পৃথিবীর অনুরূপ অন্য কোন গ্রহে আদমের বেড়ে ওঠা ও কালের বিবর্তন ধারায় বৈচিত্র্যময় পৃথিবী নামক গ্রহে স্হানান্তরিত হয়।
অন্যান্য জীবের ক্ষেত্রে বিবর্তন ধারা অনুসৃত হলেও আমাদের ক্ষেত্রে তা অনুসৃত হয়নি। আমরা মুলত মাইগ্রেটেড জাতি, পৃথিবীতে আমাদের অবতরণ হয়েছে অন্য কোন পাথুরে গ্রহ থেকে।
ডারউইন তত্ত্ববিদদের ধারণা অনুযায়ী প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বানর থেকে ধীরে ধীরে ভিন্ন প্রজাতির মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল। এইরূপ কল্পনাপ্রসূত ভ্রান্ত তত্ত্ব ইতিমধ্যে আধুনিক বিজ্ঞান সমাজে প্রত্যাখাত হয়েছে।
অনুরূপ মাটি থেকে মূর্তিময় আদম সৃষ্টির প্রচলিত ব্যাখ্যা অবৈজ্ঞানিক ও উদ্ভট। মোল্লা ও অ্যান্টি মোল্লা উভয়ই শ্রেণী আপাতত: প্রশান্তচিত্তে নিন্দ্রিত থাকুক, কালের বিবর্তন ধারায় মানবের আবির্ভাব পৃথিবীতে কিভাবে সূচিত হয়েছিল, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অচিরেই প্রকৃত ইতিহাস আমরা জানতে পারবো এবং ধর্ম ও বিজ্ঞান অন্ধত্বের উপর বিজয়ী হবে।
নিষিক্ত ডিম্বানু-শুক্রাণু ছাড়াই আদমকে যেভাবে সৃষ্টি করা হলো, অনুরূপ গবেষণায় সাফল্য অর্জন করে ইসরাইল ইউজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা।
১৪ আগষ্ট ২০২২ যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরা হল-
সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা পুরুষ ও স্ত্রীর যৌনমিলন ছাড়াই সেল থেকে কৃত্রিম উপায়ে ভ্রূণ তৈরি করলো-
নিষিক্ত ডিম্বানু-শুক্রাণু ছাড়াই তৈরি হলো পৃথিবীর প্রথম ভ্রূণ। এমন অসাধ্য সাধন করল ইসরাইল ইউজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা।
মা-বাবা বা কোনো নিষিক্ত ডিম্বাণু শুক্রাণু ছাড়াই কেবল স্টেম সেল (মূল কোষ) ব্যবহার করে ইঁদুরের ভ্রূণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটিকে যুগান্তকারী সাফল্য বলছেন বিশ্লেষকরা। ‘অ্যাসিটেড রিপ্রোডাকশন টেকনোলজি’ পদ্ধতিতে তৈরি হলো নিষিক্ত ডিম্বাণু-শুক্রাণু ছাড়া শুধুমাত্র সেল থেকে পৃথিবীর প্রথম ভ্রূণ।
পুরুষ ও স্ত্রীর যৌনমিলন ছাড়াই সেল থেকে কৃত্রিম উপায়ে ভ্রূণ তৈরি এক প্রকারে প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করা।
প্রকৃতিকে এড়িয়ে কৃত্রিম উপায়ে মানুষ তৈরি করা কতটা নৈতিক, সে বিষয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। তবু বিজ্ঞানের নিরিখে এই আবিষ্কার অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায় যে,
মানুষ কতৃক ‘মানুষ’ তৈরি আজ হাতের মুঠোয় চলে এসেছে, প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যতিরেকে আধুনিক মানব সৃষ্টি স্বয়ং আল্লাহ তাআলার পক্ষে অতীব সহজ কাজ নয় কি? প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতে বিবর্তনীয় ধারার অনুসরণ আল কোরআন দ্বারা সমর্থিত, তবে সেটি ১৪০০ সিসি মস্তিষ্ক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ঘটেনি, দ্বিপদী মানুষের শারীরিক গঠনাকৃতি, চিন্তাশীল দক্ষতা, ভাষা শিক্ষা ও লেখনী ক্ষমতা অর্জন সম্ভবপর হলেও অন্তত: অন্যসব প্রাণীদের পক্ষে সেটা অসম্ভব। প্রাকৃতিক নির্বাচন বা বিবর্তনবাদের মধ্য দিয়ে মানব জাতির উত্থান কল্পনা প্রসুত তত্ত্ব বৈ অন্য কিছু নহে।