
মো:নাজমুল হোসেন ইমন, মহানগর প্রতিনিধি, ঢাকা: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপি এখনো অটল আছে জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে দাবি মেনে নিতে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবিধানের ১৫ তম সংশোধনী নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি।জাতি সরকারকে সরাতে চায় উল্লেখ করে মি. আলমগীর বলেন, “এখন জাতির সামনে কোন বিতর্ক নেই। একটাই লক্ষ্য যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্খার যেন আমরা প্রতিফলন ঘটাতে পারি, পূরণ করতে পারি।জনগণের দাবির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জনগণ একটা দাবি পরিষ্কার করে বলে, হাসিনা থাকলে কিন্তু নির্বাচনে যাবেন না। এটা সাধারণ মানুষের কথা।”এই সেমিনারে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সাংবিধানিক বৈধতা বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা শেষে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ও সুচিন্তিতভাবে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন মোড়কে ১৫তম সংশোধনী নিয়ে এসেছে। আমরা মনে করে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। একটা জায়গায় এসে সবাই একমত হবে যে, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে হবে।এ সম্পর্কিত বিবৃতিতে বলা হয়, সুপ্রীম কোর্টের এক রায়ের ভিত্তিতে সরকার সংবিধানের ১৫তম সংশোধনের মাধ্যমে বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে এরইমধ্যে বাতিল করেছে। একই সাথে তারা বলেছে যে, এখন যেহেতু সংবিধানে উল্লেখ নেই সে কারণে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবারো প্রতিষ্ঠা করাটা অসাংবিধানিক হবে।১৯৯৬ সালে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিএনপি বলছে, ১৩ তম সংশোধনী আনা হয়েছিল ‘রাজনৈতিক সমাধান’ হিসেবে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে ‘জাতীয় ঐক্যমতের’ ভিত্তিতে। এর ফলে শুধু ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ হস্তান্তর হয়েছে তাই নয়, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিযোগিতার সুযোগও তৈরি হয়েছিল।তাদের অভিযোগ, ২০১১ সালের ৩০শে জুন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে হঠাৎ করেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বরাত দিয়ে এক তরফাভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে সংবিধানের ১৫ তম সংশোধনী আনে। যার আওতায় গত দু’টি পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দুটি নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।বিএনপি বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং অনুমোদিত একটি ব্যবস্থা। তাই এটি বাতিল করে আপিল বিভাগের রায় আসলে প্রতিষ্ঠিত ‘রাজনৈতিক প্রশ্ন’ মতবাদের সুষ্পষ্ট লংঘন।সেমিনারে এর আগে বক্তারা জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলের কথা উল্লেখ করলে সেমিনার শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, “কোয়ারশন বা জবরদস্তির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না বিএনপি। জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা করি।”এজন্যই বিএনপিও পরিষ্কার করে বলে যে তারা দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে হলে আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই। এজন্য বিএনপি ও সমমনা সব দলকে স্বার্থের ভাগাভাগি বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবিআদায়েরআন্দোলনেনামতেহবেবলেওমন্তব্যকরেন তিনি।
তিনিবলেন, সরকারের কাছথেকেতত্ত্বাবধায়ক সরকার আদায় করে নিতে হবে। রাজনৈতিক সমাধান আদালতের মাধ্যমে হয় না, রাজপথেই হয়।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপি যৌক্তিক দাবি তুলেছে। কারণ গণতন্ত্রের পথে সরকারই সবচেয়ে বড় বাধা।
একদফা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো না গেলে বর্তমান সমস্যার সমাধান হবে না বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।