ঢাকা ০৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের বিচার দাবিতে লাকসামে মানববন্ধন Logo রাজশাহী মহানগরীতে সাইবার হ্যাকার পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১ Logo কুমিল্লায় সড়ক দূর্ঘটনায় হাত হারানোর একবছর পর মারা গেলেন জুলফিকার নাঈম Logo রাজশাহীতে হামলা, চাঁদা দাবি ও নির্যাতন অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪ Logo মুরাদনগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী বিতরণ Logo কটিয়াদী করগাঁও ইউনিয়নে ভিজিএফ এর চাল বিতরণের ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ Logo সুন্দরবনে পৃথক অভিযানে ২০৫ কেজি হরিণের মাংসসহ আটক -১ Logo ড্যাব কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ শাখার ইফতার মাহফিল Logo লাকসামে ১৯ বছরের তরুনীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ : গ্রেফতার-৫ Logo জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করবে

পাবনায় পুলিশের ধাওয়ায় নিখোঁজ ব্যক্তির কঙ্কাল মিলল সাতদিন পর

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার বেড়ায় জুয়ার আসর থেকে পুলিশের ধাওয়ায় নিখোঁজ হয় মো. জিয়াউর রহমান (জিয়া) (৪৭) নামে এক জুয়ারী। নিখোঁজের সাতদিন পর বুধবার (২৭ সেপ্টম্বর) রাতে ঐ ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের চর এলাকার আগবাগশোয়া গ্রামের একটি নালা থেকে কঙ্কালটি উদ্ধার হয়।নিহত জিয়াউর রহমান উপজেলার আমিনপুর থানাধীন ঢালারচর কাজীপাড়া গ্রামের আজিজুল কাজীর ছেলে। নিহতের পরিবারের দাবি, জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য এটি পাবনা মর্গে প্রেরণ করে থানা পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশের কঙ্কালটি হস্তান্তর করলে সন্ধ্যায় দাফন করে স্বজনরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জুয়ারিরা পালিয়েছিল। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জিয়াউর রহমান নিখোঁজ হয় গত ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। এ ঘটনায় প্রথমে বেড়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে পুলিশ এতে আপত্তি জানায়।পরে তার ভাই আজাদ কাজী ২৩ সেপ্টেম্বর আমিনপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন জিডি নং ১৮০৯। অনুসন্ধানে জানা যায়, বেড়া থানাধীন নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের চরসাফুল্লাহপুর গ্রামের জয়বাংলা বাজারে প্রভাবশালী আমজাদ মোল্লার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন জুয়ার আসর বসতো। এখানে উপজেলার নগরবাড়ি,রাকসা,বেড়া,ঢালারচর,আমিনপুর, সুজানগর,দূরদূরান্তের জুয়ারিরা জুয়া খেলতে আসতো। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার খেলা চলতো সেখানে। পুলিশকে ম্যানেজ করার কথা বলে জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলতেন প্রভাবশালী আমজাদ মোল্লা। পুলিশকে যাতে টাকা না দিতে হয় সে কারণে গত ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার কৌশলে জুয়া খেলার স্থান পরিবর্তন করে জয়বাংলা বাজারের পাশেই পূর্ব শ্রীকষ্ঠদীয়া গ্রামে খেলা শুরু করে। ওই দিন দুপুরে বেড়া মডেল থানার এএসআই আনোয়ারসহ পুলিশের দল সেখানে উপস্থিত হয়ে চারজন জুয়ারীকে আটক করে। এসময় চারপাচঁজনকে পুলিশ ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। তবে পুলিশ আসার কয়েক মিনিট আগেই আমজাদ সটকে পরে। পুলিশের দাবি চারজনকে থানায় এনে পরবর্তিতে জুয়া না খেলার মুসলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, পুলিশ তিন/চারজনকে ধাওয়া করলে মকবুল নামের এক জুয়ারি পালানোর সময় আগবাগশোয়া গ্রামের একটি নালায় ঝাঁপ দিলে ২৯ হাজার টাকা পানিতে পরে যায়। সে দৌড়ানোর সময়ে ঐ এলাকার লোকজনকে বলে যায় যে, ঐ নালায় আমার ২৯ হাজার টাকা হারিয়েছে। তোমরা খুঁজে নিও। এতে আমার কোন দাবি নেই। তার পরদিন থেকে ঐ নালায় দুইদিন চলে টাকা খোঁজার হিড়িক এবং সবার তথ্য মতে প্রায় ২২ হাজার টাকা পায় লোকজন। এদিকে তখন থেকেই নিখোঁজ হয় জিয়াউর রহমান। পরদিন জিয়াকে খুঁজতে তার গ্রাম থেকে শত শত মানুষ আসে চর এলাকায়। দুইদিন চরের বিভিন্ন এলাকায় খুঁজে তার কোন সন্ধান মেলে না। এ ঘটনার সাতদিন পর চর এলাকার আগবাগশোয়া গ্রামের সেই নালা থেকে একটি মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। তবে কঙ্কালের পাশে পরে থাকা লুঙ্গি ও জিয়াউরের পড়নের গেঞ্জি দেখে চিনতে পারেন তার ছেলে আব্দুর রহিম ও তার চাচা আজম কাজী। তারা আরও জানান, যে নালায় কঙ্কালটি পাওয়া গেল, সেখানে দুইদিন লোকজন টাকা খুঁজলো তখন কারো চোখে পড়লো না? আর লাশের পাশে বস্তা দেখে তো বুঝাই যায়, জিয়াকে অন্য জায়গা থেকে কে বা কারা হত্যা করে এখানে ফেলে গেছে। এতে জনসাধারণের মনে আতঙ্ক রিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, আমজাদ মোল্লা একজন প্রকৃত জুয়ারু। সে প্রভাবশালী হওয়াতে তার অত্যাচারে চর এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। পুলিশকে ম্যানেজ করা ছাড়া জুয়া খেলা অসম্ভব। জুয়ার কারণে অনেক পরিবার ঋণগ্রস্থ হয়ে এলাকা ছেড়েছে কতো সংসার ভাংছে তার হিসাব নেই। জুয়া খেলা একেবারে বন্ধের পাশাপাশি এ ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের উর্দ্ধতন কতৃৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।নিহতের চাচা আজম কাজী জানান, পুলিশের ধাওয়াতেই জিয়া নিখোঁজ হয়েছিল। আমার ভাতিজাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারণ, ও নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন আমাদের এলাকার প্রায় দুই শ’ লোক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। যেখানে লাশ পাওয়া গেল সেখানেও খুঁজেছিলাম। জিয়ার ভেকু গাড়ি বিক্রি করা ৮-১০ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। শুক্রবারে মামলা করবেন বলে তিনি জানান।নিহত জিয়ার স্ত্রী রহিমা খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী বাড়িতে থাকা টাকাসহ ভেকু বেচা টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। আমার স্বামীও নাই, টাহা পয়সাও নাই, তাকে হারিয়ে পাগল হয়ে গেছি। আমার সোনার সংসারে তিন ছেলে, এক মেয়ে, তাদেরকে কিভাবে লালন-পালন করবো, সংসার চালাবো, কিভাবে, ভেবেই পাচ্ছি না।আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। নতুন ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমি ঐ দিন শুনলাম চরসাফুল্লা জুয়ারুদের পুলিশ ধাওয়া করেছে। আর চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। পরে জানলাম, আটক করা চারজনের মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দিছে। তার দুইদিন পর শুনি পুলিশের ধাওয়ায় একজন না কি নিখোঁজও হয়েছে। ঢালারচর থেকে অনেক লোকজন এসে তাকে দুইদিন ধরে খুঁজেছে। সাতদিন পর শুনি আগবাগশোয়া গ্রামের একটি নালার পাশে মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। পুরো ঘটনাটাই আমার কাছে রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে। এ বিষয়ে জুয়ার নেতৃত্ব দাতা আমজাদ মোল্লার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম বলেন, ওইদিন পুলিশ কাউকে ধাওয়া করেনি। তবে জুয়ার আসর বসার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। কিন্তুু দূর থেকে পুলিশের নৌকা দেখে জুয়ারিরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। নিখোঁজ জিয়াউরের কঙ্কালে রুপ নেওয়া লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ বেশ বিভ্রান্তিতে রয়েছে। মাত্র ছয় দিনের মধ্যে একটি লাশ কঙ্কালে পরিণত হওয়ার বিষয়টি আমাদের অবাক করেছে। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য কাজ করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের বিচার দাবিতে লাকসামে মানববন্ধন

SBN

SBN

পাবনায় পুলিশের ধাওয়ায় নিখোঁজ ব্যক্তির কঙ্কাল মিলল সাতদিন পর

আপডেট সময় ০৮:২৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার বেড়ায় জুয়ার আসর থেকে পুলিশের ধাওয়ায় নিখোঁজ হয় মো. জিয়াউর রহমান (জিয়া) (৪৭) নামে এক জুয়ারী। নিখোঁজের সাতদিন পর বুধবার (২৭ সেপ্টম্বর) রাতে ঐ ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের চর এলাকার আগবাগশোয়া গ্রামের একটি নালা থেকে কঙ্কালটি উদ্ধার হয়।নিহত জিয়াউর রহমান উপজেলার আমিনপুর থানাধীন ঢালারচর কাজীপাড়া গ্রামের আজিজুল কাজীর ছেলে। নিহতের পরিবারের দাবি, জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য এটি পাবনা মর্গে প্রেরণ করে থানা পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশের কঙ্কালটি হস্তান্তর করলে সন্ধ্যায় দাফন করে স্বজনরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জুয়ারিরা পালিয়েছিল। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জিয়াউর রহমান নিখোঁজ হয় গত ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। এ ঘটনায় প্রথমে বেড়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে পুলিশ এতে আপত্তি জানায়।পরে তার ভাই আজাদ কাজী ২৩ সেপ্টেম্বর আমিনপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন জিডি নং ১৮০৯। অনুসন্ধানে জানা যায়, বেড়া থানাধীন নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের চরসাফুল্লাহপুর গ্রামের জয়বাংলা বাজারে প্রভাবশালী আমজাদ মোল্লার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন জুয়ার আসর বসতো। এখানে উপজেলার নগরবাড়ি,রাকসা,বেড়া,ঢালারচর,আমিনপুর, সুজানগর,দূরদূরান্তের জুয়ারিরা জুয়া খেলতে আসতো। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার খেলা চলতো সেখানে। পুলিশকে ম্যানেজ করার কথা বলে জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলতেন প্রভাবশালী আমজাদ মোল্লা। পুলিশকে যাতে টাকা না দিতে হয় সে কারণে গত ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার কৌশলে জুয়া খেলার স্থান পরিবর্তন করে জয়বাংলা বাজারের পাশেই পূর্ব শ্রীকষ্ঠদীয়া গ্রামে খেলা শুরু করে। ওই দিন দুপুরে বেড়া মডেল থানার এএসআই আনোয়ারসহ পুলিশের দল সেখানে উপস্থিত হয়ে চারজন জুয়ারীকে আটক করে। এসময় চারপাচঁজনকে পুলিশ ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। তবে পুলিশ আসার কয়েক মিনিট আগেই আমজাদ সটকে পরে। পুলিশের দাবি চারজনকে থানায় এনে পরবর্তিতে জুয়া না খেলার মুসলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, পুলিশ তিন/চারজনকে ধাওয়া করলে মকবুল নামের এক জুয়ারি পালানোর সময় আগবাগশোয়া গ্রামের একটি নালায় ঝাঁপ দিলে ২৯ হাজার টাকা পানিতে পরে যায়। সে দৌড়ানোর সময়ে ঐ এলাকার লোকজনকে বলে যায় যে, ঐ নালায় আমার ২৯ হাজার টাকা হারিয়েছে। তোমরা খুঁজে নিও। এতে আমার কোন দাবি নেই। তার পরদিন থেকে ঐ নালায় দুইদিন চলে টাকা খোঁজার হিড়িক এবং সবার তথ্য মতে প্রায় ২২ হাজার টাকা পায় লোকজন। এদিকে তখন থেকেই নিখোঁজ হয় জিয়াউর রহমান। পরদিন জিয়াকে খুঁজতে তার গ্রাম থেকে শত শত মানুষ আসে চর এলাকায়। দুইদিন চরের বিভিন্ন এলাকায় খুঁজে তার কোন সন্ধান মেলে না। এ ঘটনার সাতদিন পর চর এলাকার আগবাগশোয়া গ্রামের সেই নালা থেকে একটি মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। তবে কঙ্কালের পাশে পরে থাকা লুঙ্গি ও জিয়াউরের পড়নের গেঞ্জি দেখে চিনতে পারেন তার ছেলে আব্দুর রহিম ও তার চাচা আজম কাজী। তারা আরও জানান, যে নালায় কঙ্কালটি পাওয়া গেল, সেখানে দুইদিন লোকজন টাকা খুঁজলো তখন কারো চোখে পড়লো না? আর লাশের পাশে বস্তা দেখে তো বুঝাই যায়, জিয়াকে অন্য জায়গা থেকে কে বা কারা হত্যা করে এখানে ফেলে গেছে। এতে জনসাধারণের মনে আতঙ্ক রিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, আমজাদ মোল্লা একজন প্রকৃত জুয়ারু। সে প্রভাবশালী হওয়াতে তার অত্যাচারে চর এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। পুলিশকে ম্যানেজ করা ছাড়া জুয়া খেলা অসম্ভব। জুয়ার কারণে অনেক পরিবার ঋণগ্রস্থ হয়ে এলাকা ছেড়েছে কতো সংসার ভাংছে তার হিসাব নেই। জুয়া খেলা একেবারে বন্ধের পাশাপাশি এ ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের উর্দ্ধতন কতৃৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।নিহতের চাচা আজম কাজী জানান, পুলিশের ধাওয়াতেই জিয়া নিখোঁজ হয়েছিল। আমার ভাতিজাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারণ, ও নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন আমাদের এলাকার প্রায় দুই শ’ লোক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। যেখানে লাশ পাওয়া গেল সেখানেও খুঁজেছিলাম। জিয়ার ভেকু গাড়ি বিক্রি করা ৮-১০ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। শুক্রবারে মামলা করবেন বলে তিনি জানান।নিহত জিয়ার স্ত্রী রহিমা খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী বাড়িতে থাকা টাকাসহ ভেকু বেচা টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। আমার স্বামীও নাই, টাহা পয়সাও নাই, তাকে হারিয়ে পাগল হয়ে গেছি। আমার সোনার সংসারে তিন ছেলে, এক মেয়ে, তাদেরকে কিভাবে লালন-পালন করবো, সংসার চালাবো, কিভাবে, ভেবেই পাচ্ছি না।আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। নতুন ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমি ঐ দিন শুনলাম চরসাফুল্লা জুয়ারুদের পুলিশ ধাওয়া করেছে। আর চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। পরে জানলাম, আটক করা চারজনের মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দিছে। তার দুইদিন পর শুনি পুলিশের ধাওয়ায় একজন না কি নিখোঁজও হয়েছে। ঢালারচর থেকে অনেক লোকজন এসে তাকে দুইদিন ধরে খুঁজেছে। সাতদিন পর শুনি আগবাগশোয়া গ্রামের একটি নালার পাশে মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। পুরো ঘটনাটাই আমার কাছে রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে। এ বিষয়ে জুয়ার নেতৃত্ব দাতা আমজাদ মোল্লার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম বলেন, ওইদিন পুলিশ কাউকে ধাওয়া করেনি। তবে জুয়ার আসর বসার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। কিন্তুু দূর থেকে পুলিশের নৌকা দেখে জুয়ারিরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। নিখোঁজ জিয়াউরের কঙ্কালে রুপ নেওয়া লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ বেশ বিভ্রান্তিতে রয়েছে। মাত্র ছয় দিনের মধ্যে একটি লাশ কঙ্কালে পরিণত হওয়ার বিষয়টি আমাদের অবাক করেছে। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য কাজ করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে।