
মোহাম্মাদ সোহেল, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মাকান্ডে। বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র এবং স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া বেকার যুবকদের মধ্যে এমন প্রবনতা বেশি দেখা যাচ্ছে শহর থেকে গ্রাম অঞ্চলে। এদের মাধ্যমে সংগঠিত হচ্ছে নানা রকম অপকর্ম। জড়িয়ে পড়ছে নেশার জগতে। অনেক সময় ঘটছে খুনের মত ঘটনাও।
এমন ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ী উত্তর পাড়া গ্রামের জোয়াদ আলী মোড় এলাকায় প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যে মোঃ জমাল হোসেন এ-র পরিবার।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে জানা যায় স্কুল পড়ুয়া সপ্তম শ্রেনির ছাত্র রিফাতকে তার এলাকারই স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া বখাটে সহপাঠি মোঃ আরিফ (২০) মোঃ শরিফ (১৮) নদীর পারে ডেকে নিয়ে বিড়ি খাওয়া শিখাতো। এ ঘটনা রিফাতের বড় ভাই দেখে ফেলায় তাদেরকে শাসন করে। তারই জেরে গত ১৩ জুন সন্ধ্যায় বাড়ীর কাজে বাহিরে গেলে সেখান থেকে যমুনা নদীতীরবর্তী স্থানে নিয়ে মোঃ আরিফ ও মোঃ শরিফ হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ৭ম শ্রেণির ছাত্র রিফাতকে (১৩) কে। সে সময় তার আর্তচিৎকারে পথচারী অমূল্য তালুকদার এগিয়ে আসলে সে প্রাণে বেঁচে যায়। তিনি জানান নদী পার হয়ে গোবিন্দাসী এলাকায় পৌছালে নদীর পারে আর্তচিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি দুজন যুবক ওই ছেলেকে হাতুড়ি দিয়ে এলো পাথারি পিটাচ্ছে। আমি কাছে যাওয়ায় তারা পালিয়ে যায়। সে সময় ছেলেটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যাওয়া অবস্থায় আমার সহযোগিতায় সেখান থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ভূঞাপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা মোঃ জামাল হোসেন সাবেক সেনা সদস্য।
এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে এলাকা মাতাব্বদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় ভূক্তভোগীর রিফাতের পিতা মোঃ জামাল হোসেন। গ্রাম্য শালিশে বিচারের নামে সময় ক্ষেপন করতে থাকে আসামী পক্ষ। কোন বিচার না পেয়ে রিফাতের বাবা বাদী হয়ে গত ১৮ জুন ৫ জনের নাম উল্লেখ করে মোকাম বিজ্ঞ সিনিয়র ম্যাজিঃ ভূঞাপুর থানা আমলী আদালত, টাঙ্গাইলে একটি মামলা করেন। আসামীরা হলেন বাগবাড়ী গ্রামের মোঃ আরিফ (২০) মোঃ শরিফ (১৮) উভয়ের পিতা মোঃ আনোয়ার হোসেন (কুরপান খলিফা) মোছাঃ শাহীনুর বেগম (৪০) স্বামী মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ আনোয়ার হোসেন (কুরপান খলিফা) (৫০) পিতা মৃত খন্দকার আফাজ উদ্দিন, মোঃ জড়িনা বেগম (৪৬) স্বামী জালাল হোসেন। অপর দিকে মামলার খবর পেয়ে ভূক্তভোগীদের শায়েস্তা করার জন্য ভূঞাপুর থানা থেকে পুলিশ নিয়ে যান হামলাকারীর পিতা মোঃ আনোয়ার হোসেন (কুরপান) এলাকাবাসির বক্তব্য শুনে ঘটনার সত্যতা বিপরীত দিকে মোড় নেওয়ায় সেখানে থেকে ফিরত আসে পুলিশ। এর পর থেকে আতংকে ছেলেকেও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পিতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ জামাল হোসেন বলেন আমার ছেলেকে আরিফ ও শরিফ হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক এলোপাতারি পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় এলাকায় বিচার না পেয়ে কোর্টে মামলা করি। গত মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকালে আমার স্ত্রী মোছাঃ রেহানা বেগম কে গলা চেপে ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে মেরে আহত করে। পরে তাকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। এর আগে কুরপানের ছেলে আমার ছেলে রিফাত কে সিগারেট মুুখে দিয়ে ভিডিও ধারন করে আমি ও আমার স্ত্রীকে বলে দিবে ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে। তিনি আরও বলেন স্থানীয় মাতব্বর সহ হামলাকারীদের পক্ষে দু-এক জন মাতাব্বর ঘটনা নিরসনের চেষ্টা না করে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টায় উভয় পক্ষ কেই প্রয়চনা দিয়ে যাচ্ছেন। এবং গত এক বছর আগে থেকে আমার বিরুদ্ধে সম্পুর্ণ সাজান সুপরিকল্পিত ভাবে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে হয়রানী করে আসছেন।
এ বিষয়ে কুরবান খলিফা বলেন আমি জামালের ছেলেকে ধূমপান করার প্রতিবাদ করলে বিগত দিনে আমার পরিবারের উপর দুই দফা হামলা করেন। কুরবান খলিফার স্ত্রী মোছাঃ শাহীনুর বেগম (৪০) বলেন এক বছর আগে জামালের পরিবারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করার কারণে আমাদেরকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন সময় অশালীন কথাবার্তা বলাকে কেন্দ্র করে ঘটনা এত দূর গড়িয়েছে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার এস আই লিটন বলেন মোঃ আনোয়ার হোসেন (কুরপান খলিফা) তার স্ত্রীকে মেরেছে এ অভিযোগে আমাকে তার এলাকায় বাগবাড়ি নিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসীর নিকট জানতে পারি কোরপানের ছেলেরাই জামালের ছেলে রিফাতকে হাতুড়ি পিটা করেছে। পরে আমরা সেখান থেকে ফিরত আসি। থানায় এসে জানতে পারি ভোক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে কোর্টে মামলা করেছে।