
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার রায় দিয়েছে আদালত। এতে ৪ জনকে মৃত্যুদন্ড ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও বাকি ১৩ আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলো, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমত আলী, তার ছেলে সোহেল মিয়া, মেয়ের জামাই যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী।
বুধবার (৩ জুলাই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী এ রায় প্রদান করেন। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় ১৩ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা হলো, সাবেক সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, হাফেজুল আসাদ সিজার, ইদ্রিস আলী, বাবু, হারিছ, বকুল, লিমন, আবদুল্লাহ, শরিফ ও মিজান।
১৩ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে তারা হলেন, রাসেল, ইমদাদ, হাবিব, ইনু মিয়া, মুছা মিয়া, জনি মিয়া, নয়ন মিয়া, মো. সাদেক মিয়া, আরব আলী, ইঞ্জিনিয়ার মশিউর রহমান, মিস্টার আলী, মো. কামরুল ইসলাম ও আল ইমরান।
গত সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক হালিম উল্লাহ চৌধুরীর আদালতে হাজির হয়ে আগের দেয়া জামিন বহাল রাখার আবেদন করেন মামলার অভিযুক্ত আসামিরা। বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বুধবার (৩ জুলাই) মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি গঠনের জের ধরে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। এ ঘটনায় সরাইল আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আবদুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইসমত আলীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত ইকবাল আজাদের ছোট ভাই এ কে এম জাহাঙ্গীর আজাদ।
দুই মাস পর ১৭ ডিসেম্বর ঘটনার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আঁখিতারা গ্রামের মো: সাদেক মিয়াসহ আরো ৭ জনের সম্পৃক্ততা পায়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর চার্জশিট দেয় পুলিশ।
২০১৩ সালের ৫ই মার্চ ইকবাল আজাদ হত্যা মামলা চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। আদালতে ডাক্তারসহ মামলার ১৪ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষী বাকী থাকা অবস্থায় মামলার ১৩৫ কার্যদিবস শেষ হয়ে যায়। ফলে বিচার কাজ ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুসারে মামলাটি আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর মামলাটি আবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্যে ২০১৪ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী হাইকোর্টে ক্রিমিনাল রিভিশন করেন মামলার বাদী। এর প্রেক্ষিত হাইকোর্ট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরপরই ২০২৩ সালের ১৭ই মে থেকে চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌঁসুলি অশোক কুমার দাশ বলেন, ১২ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার রায় হয়েছে। রায়ে ৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ১৩ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল।