ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৃথক অভিযানে হেরোইন ও ফেন্সিডিল উদ্ধার সহ আটক ৩ Logo হারানো মোবাইল উদ্ধারে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ Logo পাবনা-২ আসনে প্রার্থিতা ফেরত পেতে ডলি সায়ন্তনীর আপিল Logo নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্গনের অভিযোগে ফেনী-১ আসনের আ.লীগ প্রার্থীকে তলব Logo সুন্দরগঞ্জে বোরো বীজ ও সার বিতরণ Logo গুলশানের নিধি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা Logo সিংড়ায় মেয়রের গাড়ি, ২টি অ্যাম্বুলেন্সসহ ১১টি যানবাহন আগুনে Logo ২৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে ২৫৩টি স্থানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা Logo কিউবার প্রধানমন্ত্রী সফর চীন-কিউবার মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে Logo বেলারুশ-চীন সর্বজনীন সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের বিকাশ ঘটাবে; লুকাশেঙ্কো

স্নাতকোত্তর পাশের থমকে যাওয়া স্বপ্ন ৫০ বছরে পূরণ করলেন আব্বাস

মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও: অর্থাভাবে স্নাতকোত্তর করতে পারেননি আব্বাস আলী। স্নাতক শেষে একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর পেরিয়ে যায় দীর্ঘ ২০ বছর। স্নাতকোত্তর শেষ করতে না পারার স্বপ্ন যেন তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। সিদ্ধান্ত নেন আবার শুরু করবেন লেখাপড়া। ৫০ বছর বয়সে স্নাতকোত্তর শেষ করে পরিবার ও এলাকাবাসী প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এ বয়সে তার এমন উদ্যোগ অনেকেই উদ্বুদ্ধ করেছেন; শিক্ষার কোনো বয়স নেই।

আব্বাস আলীর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ঠুমনিয়া গ্রামের দবিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি লোহাগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন ২৪ বছর ধরে। ২০ বছর পর পুনরায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে ৩ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স, ১ বছরে মেয়াদি প্রিলিমিনারি মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে ২ দশমিক ৩১ সিজিপিএ পেয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। গত ২৭ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ ফলাফল প্রকাশ করে।

আব্বাস আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে তিনি লাহিড়ী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৪ সালে দিনাজপুর আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৯৭ সালে রুহিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। এরপরে অভাবের কারণে স্নাতকোত্তর পাশ করা হয়নি তাঁর। জীবিকার তাগিদে লোহাগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।

আব্বাস আলী বলেন, ‘শিক্ষকতা করার সময় আর্থিক সংকটের কারণে স্নাতকোত্তর কোর্স শেষ করতে না পারার দুঃখটা সব সময় মনে কষ্ট দিত। ২০১৮ সালে স্ত্রীর কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৩ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করি। এরপরে প্রিলিমিনারি মাস্টার্স কোর্স ১ বছর শেষ করার পর দিনাজপুর সরকারি কলেজে ইংরেজি বিষয় নিয়ে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হই। সেখানে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২ দশমিক ৩১ সিজিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি।’

এই বয়সে পড়ালেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে আব্বাস আলী বলেন, ‘১৯৯৭ সালের সিলেবাস ও বর্তমান সময়ে সিলেবাসে অনেক পার্থক্য। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল না আসা পর্যন্ত এক ধরনের দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ফলাফল বের হওয়ায় অনেক খুশি।’

আব্বাস আলী স্ত্রী নাজমা শিরিন বলেন, ‘ইচ্ছে থাকলেও অভাবের কারণে মাস্টার্স পাশ করতে পারেননি। আমার কাছে প্রায় এই বিষয়টি জানাতো। পরে আমি টাকা জোগাড় করে দিয়ে ভর্তি হতে সাহস দিই। ফলাফল প্রকাশের পর এখন পরিবার, প্রতিবেশী সবার মুখে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন।’

আব্বাস আলীর বড় ছেলে সাকিব এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। সাকিব বলে, ‘বাড়িতে পড়া ফাঁকি দিয়ে খেলা করতে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে গত ৫ বছর ধরে। বাবা আমাদের আগে পড়তে বসে। আমার আর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে বাবার পরিশ্রম সফল। তার ফলাফলে আমরা সবাই আনন্দিত।’

লোহাগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আব্বাস আলী পরিশ্রমী একজন শিক্ষক। এই বয়সে তাঁর এমন অর্জন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার বলেন, মানুষের ইচ্ছা শক্তি থাকলে অসম্ভবও সম্ভব করা যায়। আব্বাস আলীর ইচ্ছাশক্তির কাছে বয়স হার মেনেছে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৃথক অভিযানে হেরোইন ও ফেন্সিডিল উদ্ধার সহ আটক ৩

স্নাতকোত্তর পাশের থমকে যাওয়া স্বপ্ন ৫০ বছরে পূরণ করলেন আব্বাস

আপডেট সময় ০৭:৫৬:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অগাস্ট ২০২৩

মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও: অর্থাভাবে স্নাতকোত্তর করতে পারেননি আব্বাস আলী। স্নাতক শেষে একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর পেরিয়ে যায় দীর্ঘ ২০ বছর। স্নাতকোত্তর শেষ করতে না পারার স্বপ্ন যেন তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। সিদ্ধান্ত নেন আবার শুরু করবেন লেখাপড়া। ৫০ বছর বয়সে স্নাতকোত্তর শেষ করে পরিবার ও এলাকাবাসী প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এ বয়সে তার এমন উদ্যোগ অনেকেই উদ্বুদ্ধ করেছেন; শিক্ষার কোনো বয়স নেই।

আব্বাস আলীর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ঠুমনিয়া গ্রামের দবিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি লোহাগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন ২৪ বছর ধরে। ২০ বছর পর পুনরায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে ৩ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স, ১ বছরে মেয়াদি প্রিলিমিনারি মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে ২ দশমিক ৩১ সিজিপিএ পেয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। গত ২৭ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ ফলাফল প্রকাশ করে।

আব্বাস আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে তিনি লাহিড়ী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৪ সালে দিনাজপুর আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৯৭ সালে রুহিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। এরপরে অভাবের কারণে স্নাতকোত্তর পাশ করা হয়নি তাঁর। জীবিকার তাগিদে লোহাগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।

আব্বাস আলী বলেন, ‘শিক্ষকতা করার সময় আর্থিক সংকটের কারণে স্নাতকোত্তর কোর্স শেষ করতে না পারার দুঃখটা সব সময় মনে কষ্ট দিত। ২০১৮ সালে স্ত্রীর কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৩ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করি। এরপরে প্রিলিমিনারি মাস্টার্স কোর্স ১ বছর শেষ করার পর দিনাজপুর সরকারি কলেজে ইংরেজি বিষয় নিয়ে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হই। সেখানে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২ দশমিক ৩১ সিজিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি।’

এই বয়সে পড়ালেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে আব্বাস আলী বলেন, ‘১৯৯৭ সালের সিলেবাস ও বর্তমান সময়ে সিলেবাসে অনেক পার্থক্য। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল না আসা পর্যন্ত এক ধরনের দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ফলাফল বের হওয়ায় অনেক খুশি।’

আব্বাস আলী স্ত্রী নাজমা শিরিন বলেন, ‘ইচ্ছে থাকলেও অভাবের কারণে মাস্টার্স পাশ করতে পারেননি। আমার কাছে প্রায় এই বিষয়টি জানাতো। পরে আমি টাকা জোগাড় করে দিয়ে ভর্তি হতে সাহস দিই। ফলাফল প্রকাশের পর এখন পরিবার, প্রতিবেশী সবার মুখে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন।’

আব্বাস আলীর বড় ছেলে সাকিব এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। সাকিব বলে, ‘বাড়িতে পড়া ফাঁকি দিয়ে খেলা করতে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে গত ৫ বছর ধরে। বাবা আমাদের আগে পড়তে বসে। আমার আর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে বাবার পরিশ্রম সফল। তার ফলাফলে আমরা সবাই আনন্দিত।’

লোহাগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আব্বাস আলী পরিশ্রমী একজন শিক্ষক। এই বয়সে তাঁর এমন অর্জন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার বলেন, মানুষের ইচ্ছা শক্তি থাকলে অসম্ভবও সম্ভব করা যায়। আব্বাস আলীর ইচ্ছাশক্তির কাছে বয়স হার মেনেছে।