ঢাকা ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দুর্নীতির মধু কুমিল্লা বোর্ড

উচ্চ আদালতের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি যেন কিছুতেই থামছে না।
একের পর এক নানা ঘটনা নতুন নতুন বির্তকের সৃষ্টি করছে কুমিল্লা বোর্ডে।
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বোর্ড সচিব জামাল নাছের ও সচিব নূর মোহাম্মদ সীমাহিন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন।

এখন আবার উচ্চ আদালতের আদেশকে অমান্য করে মন্ত্রনালয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোটি টাকা বাণিজ্যের ধান্দায় আছেন বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিব।
জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের আদেশকে অমান্য করা ২০১০ সালে ১২ জনকে নিয়োগ প্রদান করে কুমিল্লা বোর্ড।
এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে জনৈক আলমগীর নামের এক ব্যক্তি উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং- ২৬৭৮ /২০১৬

বিধি বহিঃভূত ভাবে জনবল নিয়োগ করায় তদানীন্তন সময় তাদের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট শোকজ করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই যে- মামলার বিবাদীদেরকে মামলা চলমান অবস্থায় প্রমোশন দিয়ে মহামান্য কোর্টকে অবমাননা করেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।

এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে হাবিবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি।
বিষয়টি মন্ত্রনালয়ে জানাজানি হলে ঐ সময় কুমিল্লা বোর্ডে জনবল নিয়োগের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়।

সম্প্রতি কুমিল্লা বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিব কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের জনবল নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রনালয়কে বিভ্রান্ত করে জনবল নিয়োগের একটি বিজ্ঞিপ্তি প্রকাশ করেন।

তড়িগড়ি করে লোক নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের ফন্দি করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিব।
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সচিব সম্পূর্ণ প্রতারণা করে মন্ত্রণালয়কে মামলা চলমান আছে না বলে শিক্ষা বোর্ড নিয়োগের আদেশটি আনেন. যা পূর্ব পরিকল্পনামাফিক কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা বিরাজমান আছে। যাহা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা/কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে সত্যতা স্বীকার করেন।
ইতিমধ্যে লাখ লাখ টাকা নিয়োগের নামে কালেকশন করা হয়েছে বলে প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে। বোর্ডের সাবেক সিবিএ সেক্রেটারি সৈয়দ মুকবুল আহামেদ এই নিয়োগ পক্রিয়ার টাকা লেনদেন করছেন বলে জানা যায়।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেন যে- চেয়ারম্যান লোক নিয়োগ করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন যেইভাবে হোক তিনি লোক নিয়োগ করবেন বলে বোর্ড কর্মচারীদের কে অভিহিত করেন।

কুমিল্লা বোর্ডের অপকর্মঃ-

সাধারণত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মূল পদ সরকারি কলেজ। কলেজে না পড়িয়ে বহু শিক্ষক তদবির করে শিক্ষাবোর্ডে প্রেষণে গিয়ে আর ফিরতে চান না নিজ পেশায়। বছরের পর বছর বোর্ডের পদ আঁকড়ে থেকে জড়িয়ে পড়ছেন দুর্নীতিতে। ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তিন বছরের বেশি এবং চাকরি জীবনে দুই বারের বেশি কোনো শিক্ষক প্রশাসনিক পদে থাকতে পারবেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, অস্বাভাবিক সময় ধরে বোর্ডে যারা কর্মরত আছেন তাদের তথ্য পেলে বদলি করা হবে। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ না পেলে তো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না।

কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামাল নাসের। তিনি ২০১৫ সালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক হিসাব নিরীক্ষা পদে যোগ দেন। পরে কলেজ পরিদর্শক পদে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের মার্চে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে তার পদায়ন হয়। আবার ২০২২ ঘুরে ফিরে তিনি কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা বোর্ডের সচিব নূর মোহাম্মদ এক যুগের বেশি সময় ধরে বোর্ডে কর্মরত। তিনি ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি উপ-সচিব (একাডেমিক) পদে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ তাকে সচিব পদে পদায়ন করা হয়েছে। উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর থেকে কর্মরত। উপ-কলেজ পরিদর্শক বিজন কুমার চক্রবর্তী ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর থেকে একই পদে আছেন। উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহিদুল হক ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে বোর্ডে আছেন। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চমাধ্যমিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল থেকে বোর্ডে কর্মরত। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৬ মার্চ থেকে কুমিল্লা বোর্ডে কর্মরত।

জানা গেছে, সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মূলত নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষা বোর্ডগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি, পাঠদানের অনুমতি, একাডেমিক স্বীকৃতি, অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা, বিভাগ ও বিষয় খোলা, আসন বৃদ্ধি বোর্ডের দায়িত্ব। বোর্ডের কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বোর্ডের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমোদন দেন। তবে বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এ কাজে বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোটা অংঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা হয়। এ কাজে বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, বোর্ডের কর্মকর্তারা টাকা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন করেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি অনুমোদনেও বোর্ডের কর্মকর্তাদের টাকা দিতে হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন, ভর্তি বাতিল, নিবন্ধন, শ্রেণি ছাড়পত্র, দ্বি-নকল রেজিষ্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহের কাজ টাকা ছাড়া হয় না। নাম ও বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রেও টাকা গুনতে হয় শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি (বাশিস) নজরুল ইসলাম রনি বলেন, বোর্ডে প্রেষণে একবার আসলে কেউ আর যেতে চান না। এখানে মধু আছে। শিক্ষার পুরো কাজ বোর্ডে হয়। টাকা না দিলে কোনো ফাইল নড়ে না। অভিজ্ঞতা না থাকলেও টাকার বিনিময়ে প্রধান পরীক্ষক বানানো হয়। ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও বোর্ড টাকা নিয়ে নির্বাচন দেয় না। তিনি আরো বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান, স্বীকৃতির অনুমোদন, শাখা খোলা, আসনবৃদ্ধির কাজ টাকা না দিলে বোর্ড করে না। শিক্ষকরা বোর্ডে গেলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী তিন বছরের বেশি সময় যারা কর্মরত আছেন তাদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সাবেক এক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বোর্ডের চাকরি সোনার হরিন। পৃথিবীর কোথাও এতো বোনাস নাই। বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারা বছর যা বেতন পায় তার চেয়ে বেশি বোনাস পান। নিবন্ধন, ফরম পূরণ, পরীক্ষার প্রস্তুতি, পরীক্ষা, ফল প্রকাশের কাজে বোনাস দেওয়া হয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক গুদামে গেলেও ভাতা পান। বোর্ড নিজেরা আইন করে এসব সুবিধা নিচ্ছেন। এগুলো বাতিল হওয়া উচিত। বোর্ডে কেনাকাটায় সব চেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বোর্ডে অন্তত পক্ষে স্থায়ী কর্মচারীদের প্রায় সকলেই বিক্ষুপ্ত আকারে বলেছেন (ডেপুটি লেভেলের) কলেজগুলো থেকে এসে এখন শিকড় গেড়ে আছেন। যার কারনে আমাদের পদোন্নতি হচ্ছে না।

এ বিষয়ে আমাদের ব্যাপক অনুসন্ধান চলছে। বিস্তারিত ধারাবাহিক আকারে ছাপা হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দুর্নীতির মধু কুমিল্লা বোর্ড

উচ্চ আদালতের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি

আপডেট সময় ১২:৪৫:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি যেন কিছুতেই থামছে না।
একের পর এক নানা ঘটনা নতুন নতুন বির্তকের সৃষ্টি করছে কুমিল্লা বোর্ডে।
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বোর্ড সচিব জামাল নাছের ও সচিব নূর মোহাম্মদ সীমাহিন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন।

এখন আবার উচ্চ আদালতের আদেশকে অমান্য করে মন্ত্রনালয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোটি টাকা বাণিজ্যের ধান্দায় আছেন বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিব।
জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের আদেশকে অমান্য করা ২০১০ সালে ১২ জনকে নিয়োগ প্রদান করে কুমিল্লা বোর্ড।
এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে জনৈক আলমগীর নামের এক ব্যক্তি উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং- ২৬৭৮ /২০১৬

বিধি বহিঃভূত ভাবে জনবল নিয়োগ করায় তদানীন্তন সময় তাদের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট শোকজ করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই যে- মামলার বিবাদীদেরকে মামলা চলমান অবস্থায় প্রমোশন দিয়ে মহামান্য কোর্টকে অবমাননা করেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।

এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে হাবিবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি।
বিষয়টি মন্ত্রনালয়ে জানাজানি হলে ঐ সময় কুমিল্লা বোর্ডে জনবল নিয়োগের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়।

সম্প্রতি কুমিল্লা বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিব কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের জনবল নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রনালয়কে বিভ্রান্ত করে জনবল নিয়োগের একটি বিজ্ঞিপ্তি প্রকাশ করেন।

তড়িগড়ি করে লোক নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের ফন্দি করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিব।
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সচিব সম্পূর্ণ প্রতারণা করে মন্ত্রণালয়কে মামলা চলমান আছে না বলে শিক্ষা বোর্ড নিয়োগের আদেশটি আনেন. যা পূর্ব পরিকল্পনামাফিক কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা বিরাজমান আছে। যাহা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা/কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে সত্যতা স্বীকার করেন।
ইতিমধ্যে লাখ লাখ টাকা নিয়োগের নামে কালেকশন করা হয়েছে বলে প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে। বোর্ডের সাবেক সিবিএ সেক্রেটারি সৈয়দ মুকবুল আহামেদ এই নিয়োগ পক্রিয়ার টাকা লেনদেন করছেন বলে জানা যায়।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেন যে- চেয়ারম্যান লোক নিয়োগ করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন যেইভাবে হোক তিনি লোক নিয়োগ করবেন বলে বোর্ড কর্মচারীদের কে অভিহিত করেন।

কুমিল্লা বোর্ডের অপকর্মঃ-

সাধারণত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মূল পদ সরকারি কলেজ। কলেজে না পড়িয়ে বহু শিক্ষক তদবির করে শিক্ষাবোর্ডে প্রেষণে গিয়ে আর ফিরতে চান না নিজ পেশায়। বছরের পর বছর বোর্ডের পদ আঁকড়ে থেকে জড়িয়ে পড়ছেন দুর্নীতিতে। ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তিন বছরের বেশি এবং চাকরি জীবনে দুই বারের বেশি কোনো শিক্ষক প্রশাসনিক পদে থাকতে পারবেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, অস্বাভাবিক সময় ধরে বোর্ডে যারা কর্মরত আছেন তাদের তথ্য পেলে বদলি করা হবে। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ না পেলে তো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না।

কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামাল নাসের। তিনি ২০১৫ সালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক হিসাব নিরীক্ষা পদে যোগ দেন। পরে কলেজ পরিদর্শক পদে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের মার্চে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে তার পদায়ন হয়। আবার ২০২২ ঘুরে ফিরে তিনি কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা বোর্ডের সচিব নূর মোহাম্মদ এক যুগের বেশি সময় ধরে বোর্ডে কর্মরত। তিনি ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি উপ-সচিব (একাডেমিক) পদে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ তাকে সচিব পদে পদায়ন করা হয়েছে। উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর থেকে কর্মরত। উপ-কলেজ পরিদর্শক বিজন কুমার চক্রবর্তী ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর থেকে একই পদে আছেন। উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহিদুল হক ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে বোর্ডে আছেন। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চমাধ্যমিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল থেকে বোর্ডে কর্মরত। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৬ মার্চ থেকে কুমিল্লা বোর্ডে কর্মরত।

জানা গেছে, সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মূলত নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষা বোর্ডগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি, পাঠদানের অনুমতি, একাডেমিক স্বীকৃতি, অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা, বিভাগ ও বিষয় খোলা, আসন বৃদ্ধি বোর্ডের দায়িত্ব। বোর্ডের কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বোর্ডের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমোদন দেন। তবে বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এ কাজে বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোটা অংঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা হয়। এ কাজে বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, বোর্ডের কর্মকর্তারা টাকা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন করেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি অনুমোদনেও বোর্ডের কর্মকর্তাদের টাকা দিতে হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন, ভর্তি বাতিল, নিবন্ধন, শ্রেণি ছাড়পত্র, দ্বি-নকল রেজিষ্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহের কাজ টাকা ছাড়া হয় না। নাম ও বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রেও টাকা গুনতে হয় শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি (বাশিস) নজরুল ইসলাম রনি বলেন, বোর্ডে প্রেষণে একবার আসলে কেউ আর যেতে চান না। এখানে মধু আছে। শিক্ষার পুরো কাজ বোর্ডে হয়। টাকা না দিলে কোনো ফাইল নড়ে না। অভিজ্ঞতা না থাকলেও টাকার বিনিময়ে প্রধান পরীক্ষক বানানো হয়। ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও বোর্ড টাকা নিয়ে নির্বাচন দেয় না। তিনি আরো বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান, স্বীকৃতির অনুমোদন, শাখা খোলা, আসনবৃদ্ধির কাজ টাকা না দিলে বোর্ড করে না। শিক্ষকরা বোর্ডে গেলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী তিন বছরের বেশি সময় যারা কর্মরত আছেন তাদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সাবেক এক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বোর্ডের চাকরি সোনার হরিন। পৃথিবীর কোথাও এতো বোনাস নাই। বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারা বছর যা বেতন পায় তার চেয়ে বেশি বোনাস পান। নিবন্ধন, ফরম পূরণ, পরীক্ষার প্রস্তুতি, পরীক্ষা, ফল প্রকাশের কাজে বোনাস দেওয়া হয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক গুদামে গেলেও ভাতা পান। বোর্ড নিজেরা আইন করে এসব সুবিধা নিচ্ছেন। এগুলো বাতিল হওয়া উচিত। বোর্ডে কেনাকাটায় সব চেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বোর্ডে অন্তত পক্ষে স্থায়ী কর্মচারীদের প্রায় সকলেই বিক্ষুপ্ত আকারে বলেছেন (ডেপুটি লেভেলের) কলেজগুলো থেকে এসে এখন শিকড় গেড়ে আছেন। যার কারনে আমাদের পদোন্নতি হচ্ছে না।

এ বিষয়ে আমাদের ব্যাপক অনুসন্ধান চলছে। বিস্তারিত ধারাবাহিক আকারে ছাপা হবে।