ঢাকা ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

শিক্ষকদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে কঠোর নির্দেশনা

মো: নাজমুল হোসেন ইমন, মহানগর প্রতিনিধি, ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে আনতে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষক ও বিভিন্ন শিক্ষা অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপসহ সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। অন্যদিকে, সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্যকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের সতর্ক করে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
জানা গেছে, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে একটি বড় অংশ সরকারের সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ার নানা ধরনের পোস্ট দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোস্ট দেন ফেসবুকে। ফেসবুক ব্যবহারকারী শিক্ষকদের মধ্যে মূলত তিনটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ সরকারের সমালোচনা থেকে বিরত থাকে, একটি পক্ষ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে এবং তৃতীয় পক্ষটি সবসময়ই সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে সরকার। গত ৩ আগস্ট বিভাগীয় উপপরিচালকদের মাধ্যমে এক নির্দেশনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিভিন্ন শিক্ষা অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আদেশে নির্ধারিত ছকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাপ্তরিক বা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজ, ব্যক্তিগত বা দাপ্তরিক আইডি, মেসেঞ্জার গ্রুপ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া থাকলে সে-সংক্রান্ত তথ্য ইমেইলে ১৭ আগস্টের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও ব্যক্তিগত আইডিতে নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক, কুরুচিপূর্ণ ও নেতিবাচক বিষয়ে পোস্ট, মন্তব্য, লাইক, শেয়ার করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নির্দেশিকার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের দাপ্তরিক বা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজ, ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক আইডি, মেসেঞ্জার গ্রুপ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ সংরক্ষণে রাখা প্রয়োজন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণবিধি রয়েছে। সবাইকে এই বিধিগুলো মানতে হয়। অনেক সময় বুঝে হোক, না বুঝে হোক, অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করেন, যা চাকরির পরিপন্থি কার্যক্রম। আমরা তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এটি (নির্দেশনা) দিয়েছি। কড়াকড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন কেউ বুঝে এগুলো করে, তখন তো আমরা ব্যবস্থা নেবই।

অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষকদের পোস্ট, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার দু-তিন বছর আগেও এত বেশি ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সে কারণে অধিদপ্তর থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তিনি জানান, শিক্ষকদের অনেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে জানেন না। সোশ্যাল মিডিয়া দেওয়া একটি পোস্টের কারণে অনেক শিক্ষকই জেলে যেতে পারেন। সেজন্য আমরা তথ্য চেয়েছি, যাতে তাদের সতর্ক করতে পারি।

এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, যারা সরকারি চাকরি করে তাদের একটা নিয়মনীতির মধ্যে থাকতে হয়। শিক্ষকরা এমন কোনো পোস্ট দিতে পারেন না, যা সরকারের বিপক্ষে যায়। তবে দেখা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারে এই সংকট বেশি রয়েছে। এমন সব আপত্তিজনক কথা বলে, মনে হয় যেন কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী। অন্য কোনো ক্যাডারে এমনটা দেখা যায় না। এ কারণেই বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেককে শোকজ দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিকের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, উদ্যোগ ভালো হলেও এর নেতিবাচক দিকও দেখতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেমন কমবে, তেমনি সরকারের প্রতি শিক্ষকদের ক্ষোভ বাড়বে। আবার, এর ফলে শিক্ষকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়তে পারেন। একাধিক শিক্ষক নেতা জানান, উদ্যোগটা ভালো হলেও এতে অনেক কর্মকর্তা শিক্ষকদের ওপর চড়াও হতে পারেন। শিক্ষকরা তো অনেক কিছু শেয়ার করেন। দেখা গেল, এটি কোনো কর্মকর্তার ভালো লাগল না, তিনি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন। মোট কথা, এর নেতিবাচক দিক হবে, শিক্ষকদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের দূরত্ব বাড়বে। অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিগত সময়ে ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা না করেও অনেক শিক্ষক শোকজের আওতায় এসেছেন। এটি সামনে আরও বাড়তে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমার পর্যবেক্ষণ হলো শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দায়িত্বশীল আচরণ করেন না। সে বিষয়ে বিধিনিষেধ থাকতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, শিক্ষকরা কোনো বিষয়ে নিজের মতামত দিতে পারবেন না। সরকারের সব সিদ্ধান্তই তাদের মেনে নিতে হবে এটাও ঠিক নয়। তাতে তারা পুতুল বা রোবট হয়ে যাবেন। শিক্ষকদের গঠনমূলক সমালোচনার জায়গা থাকতে হবে। এতে শিক্ষা ব্যবস্থারই উন্নতি হবে। তিনি বলেন, কেউ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কোনো তথ্য বা গুজব ছড়ালে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষক নেতা, সাধারণ শিক্ষক, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা গাইডলাইন তৈরি করা যায়; কিন্তু ঢালাওভাবে নিয়মনীতি করলে শিক্ষকদের মধ্যে ভীতি ছড়াবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো বাড়াবাড়ি। এতে শিক্ষকদের গোপনীয়তা থাকবে না। শিক্ষকরা কথা বলতে পারলে তাদের ক্ষোভ আর কষ্টের জায়গা জানা যাবে। নইলে ক্ষোভ থেকে নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও পেশাগত মর্যাদার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী..লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

শিক্ষকদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে কঠোর নির্দেশনা

আপডেট সময় ০১:৫৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩

মো: নাজমুল হোসেন ইমন, মহানগর প্রতিনিধি, ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে আনতে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষক ও বিভিন্ন শিক্ষা অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপসহ সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। অন্যদিকে, সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্যকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের সতর্ক করে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
জানা গেছে, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে একটি বড় অংশ সরকারের সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ার নানা ধরনের পোস্ট দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোস্ট দেন ফেসবুকে। ফেসবুক ব্যবহারকারী শিক্ষকদের মধ্যে মূলত তিনটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ সরকারের সমালোচনা থেকে বিরত থাকে, একটি পক্ষ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে এবং তৃতীয় পক্ষটি সবসময়ই সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে সরকার। গত ৩ আগস্ট বিভাগীয় উপপরিচালকদের মাধ্যমে এক নির্দেশনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিভিন্ন শিক্ষা অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আদেশে নির্ধারিত ছকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাপ্তরিক বা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজ, ব্যক্তিগত বা দাপ্তরিক আইডি, মেসেঞ্জার গ্রুপ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া থাকলে সে-সংক্রান্ত তথ্য ইমেইলে ১৭ আগস্টের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও ব্যক্তিগত আইডিতে নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক, কুরুচিপূর্ণ ও নেতিবাচক বিষয়ে পোস্ট, মন্তব্য, লাইক, শেয়ার করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নির্দেশিকার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের দাপ্তরিক বা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজ, ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক আইডি, মেসেঞ্জার গ্রুপ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ সংরক্ষণে রাখা প্রয়োজন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণবিধি রয়েছে। সবাইকে এই বিধিগুলো মানতে হয়। অনেক সময় বুঝে হোক, না বুঝে হোক, অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করেন, যা চাকরির পরিপন্থি কার্যক্রম। আমরা তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এটি (নির্দেশনা) দিয়েছি। কড়াকড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন কেউ বুঝে এগুলো করে, তখন তো আমরা ব্যবস্থা নেবই।

অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষকদের পোস্ট, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার দু-তিন বছর আগেও এত বেশি ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সে কারণে অধিদপ্তর থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তিনি জানান, শিক্ষকদের অনেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে জানেন না। সোশ্যাল মিডিয়া দেওয়া একটি পোস্টের কারণে অনেক শিক্ষকই জেলে যেতে পারেন। সেজন্য আমরা তথ্য চেয়েছি, যাতে তাদের সতর্ক করতে পারি।

এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, যারা সরকারি চাকরি করে তাদের একটা নিয়মনীতির মধ্যে থাকতে হয়। শিক্ষকরা এমন কোনো পোস্ট দিতে পারেন না, যা সরকারের বিপক্ষে যায়। তবে দেখা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারে এই সংকট বেশি রয়েছে। এমন সব আপত্তিজনক কথা বলে, মনে হয় যেন কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী। অন্য কোনো ক্যাডারে এমনটা দেখা যায় না। এ কারণেই বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেককে শোকজ দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিকের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, উদ্যোগ ভালো হলেও এর নেতিবাচক দিকও দেখতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেমন কমবে, তেমনি সরকারের প্রতি শিক্ষকদের ক্ষোভ বাড়বে। আবার, এর ফলে শিক্ষকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়তে পারেন। একাধিক শিক্ষক নেতা জানান, উদ্যোগটা ভালো হলেও এতে অনেক কর্মকর্তা শিক্ষকদের ওপর চড়াও হতে পারেন। শিক্ষকরা তো অনেক কিছু শেয়ার করেন। দেখা গেল, এটি কোনো কর্মকর্তার ভালো লাগল না, তিনি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন। মোট কথা, এর নেতিবাচক দিক হবে, শিক্ষকদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের দূরত্ব বাড়বে। অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিগত সময়ে ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা না করেও অনেক শিক্ষক শোকজের আওতায় এসেছেন। এটি সামনে আরও বাড়তে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমার পর্যবেক্ষণ হলো শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দায়িত্বশীল আচরণ করেন না। সে বিষয়ে বিধিনিষেধ থাকতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, শিক্ষকরা কোনো বিষয়ে নিজের মতামত দিতে পারবেন না। সরকারের সব সিদ্ধান্তই তাদের মেনে নিতে হবে এটাও ঠিক নয়। তাতে তারা পুতুল বা রোবট হয়ে যাবেন। শিক্ষকদের গঠনমূলক সমালোচনার জায়গা থাকতে হবে। এতে শিক্ষা ব্যবস্থারই উন্নতি হবে। তিনি বলেন, কেউ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কোনো তথ্য বা গুজব ছড়ালে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষক নেতা, সাধারণ শিক্ষক, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা গাইডলাইন তৈরি করা যায়; কিন্তু ঢালাওভাবে নিয়মনীতি করলে শিক্ষকদের মধ্যে ভীতি ছড়াবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো বাড়াবাড়ি। এতে শিক্ষকদের গোপনীয়তা থাকবে না। শিক্ষকরা কথা বলতে পারলে তাদের ক্ষোভ আর কষ্টের জায়গা জানা যাবে। নইলে ক্ষোভ থেকে নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি হবে।