সম্প্রতি, ‘লায়ন সিটি’ জাহাজটি ১ হাজার ৭৩৮ কন্টেইনার পণ্য নিয়ে চীনের শিয়ামেন হাইথিয়ান টার্মিনাল বন্দর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ২০১৪ সালে চালু হওয়ার পর থেকে, এই সরাসরি জাহাজ রুটটি ২৯.২ বিলিয়ন ইউয়ানের আমদানি ও রপ্তানি মূল্যসহ মোট ৪৫৮টি ট্রিপ পরিচালনা করেছে। এটি ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে বাস্তবসম্মত সহযোগিতার একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ব্রিকস সহযোগিতা প্রক্রিয়ার ১৮ বছরের উন্নয়নের ইতিহাসে এরকম আরও অনেক গল্প রয়েছে। ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর, রাশিয়ার কাজানে ১৬তম ব্রিকস নেতাদের শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এতে অংশগ্রহণ করবেন। ব্রিকস দেশগুলোর ঐতিহাসিক সম্প্রসারণ অর্জনের পর এটিই প্রথম শীর্ষ সম্মেলন এবং এটি ‘বৃহত্তর ব্রিকস সহযোগিতার’ জন্য একটি নতুন সূচনাও। ৩০টিরও বেশি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতারা সহযোগিতা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা করবেন।
বর্তমানে, বিশ্ব এক শতাব্দীতে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে। একদিকে, বিশ্বায়ন পাল্টা স্রোতের মুখোমুখি হয়েছে, এবং অন্যদিকে, ‘গ্লোবাল সাউথ’ একটি গোষ্ঠী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ব্রিকস সহযোগিতা প্রক্রিয়া ‘গ্লোবাল সাউথে’র জন্য সহযোগিতা, আলোচনা এবং অভিন্ন উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
ব্রিকস দেশগুলো সর্বদা বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা মেনে চলে, কার্যকরভাবে বিশ্বব্যাপী শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা এবং মসৃণতা বজায় রাখে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে উন্নীত করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান এবং ইথিওপিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের পরে, ‘বৃহত্তর ব্রিকস’ সদস্য দেশগুলোর জনসংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাদের অবদান ৫০ শতাংশেরও বেশি থাকবে। ক্রয় ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে, তা ইতোমধ্যে জি-৭ কে ছাড়িয়ে গেছে এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আরও বেশি অবদান রাখার ক্ষমতা রাখে।
শুধু তাই নয়, ব্রিকস সহযোগিতা প্রক্রিয়া দেশগুলোকে বৈশ্বিক শাসনে অংশগ্রহণের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম ও সুযোগ প্রদান করে। ব্রিকস দেশগুলো সর্বদা জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিকে সমুন্নত রেখেছে এবং রাজনৈতিক উপায়ে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের ধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ভবিষ্যতে, যত বেশি সংখ্যক দেশ যোগদানের জন্য আবেদন করবে, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ‘বিগ ব্রিকসে’র ইতিবাচক, স্থিতিশীল এবং কল্যাণকর ভূমিকা আরও বিশিষ্ট হয়ে উঠবে, এবং বহুমুখীতা ও বহুপক্ষীয়তা রক্ষার জন্য বিশ্বের শক্তি বাড়তে থাকবে।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে, চীন সবসময়ই ব্রিকস সহযোগিতা প্রক্রিয়ার দৃঢ় সমর্থক ও অংশগ্রহণকারী এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ‘ব্রিক্স চেতনা’ প্রস্তাব করা থেকে শুরু করে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সূচনা এবং তারপরে ‘ব্রিকস প্লাস’ মডেলের প্রস্তাব করা, চীন সবসময় ব্রিকস প্রক্রিয়ার ‘সোনা’ ব্র্যান্ডে অবদান রেখেছে। আশা করা যায় যে চীন এবং অন্যান্য ‘ব্রিকস’ সদস্যদের প্রচেষ্টায়, এই শীর্ষ সম্মেলন অশান্ত বিশ্বে আরও স্থিতিশীলতা ও ইতিবাচক শক্তি যোগ করবে এবং ‘গ্লোবাল সাউথে’র ঐক্য ও আত্মশক্তিকে আরও উন্নীত করবে। তাই ‘বৃহত্তর ব্রিকস সহযোগিতা’র সম্ভাবনা প্রতিশ্রুতিশীল!
সূত্র: স্বর্ণা-হাশিম-লিলি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।