ঢাকা ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বালিয়াডাঙ্গীতে ইসতিসকার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত Logo বরুড়ায় কিশোরীকে অপহরণের পর পরিবারের অমতে বিয়ের অভিযোগ Logo বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাউন্সির মেহেরুন্নেসা হসপিটালে ভর্তি Logo মুরাদনগরে নাগরিক ঐক্য পরিষদের প্রার্থী ঘোষনা Logo ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী পুরাতন চিন্তামন ঘোড়ার মেলা শুরু Logo কালীগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির উদ্যোগে শরবত পানি ওরস্যালাইন বিতরণ Logo ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি ও বিডব্লিউএবি মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই Logo কালীগঞ্জে ভাংগাড়ি ব্যবসায়ীকে আটকের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ Logo নষ্ট ফ্যান সারতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পষ্টে কৃষকের মৃত্যু Logo বাগেরহাটে তিন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় পুনরায় নির্বাচিত

ভৈরবে নৌকা ডুবির ঘটনায় ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার : নিখোঁজ ৬

মোঃ ওয়াহিদ, কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাল্কহেডের ধাক্কায় প্রমোদ তরী ডুবে যাওয়ার ঘটনায় তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দলের সদস্যরা। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরো ৬জন।

নিহতরা হলেন, শহরের কমলপুর এলাকার সুবর্ণা ও পুলিশের কন্সটেবল সোহেল রানার স্ত্রী মৌসুমি (২৫) ও মেয়ে মাহমুদা (৭)।

নিখোঁজরা হলেন, পুলিশের কনষ্টবল সোহেল রানা ও ছেলে রায়সুল (৫), শহরের নিউটাউন এলাকার আরাদ্দা, বেলাল দে, কটিয়াদী উপজেলার চান্দ্পুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বেলুন চন্দ্র দে, নরসিংদীর রায়পুরা এলাকার আনিকা আক্তার। গতকাল সন্ধা আনুমানিক ৬ টার সময় ভৈরব মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ১৮ ঘন্টা পর পুলিশ কনষ্টবলের স্ত্রী ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেন বিআইডব্লিউটিএ এর ডুবুরি দল।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গতকাল শুকবার সন্ধা অনুমানিক ৬ টার সময় মেঘনা নদীতে নৌকা নিয়ে নারী পুরূষ ও শিশুসহ ২১ জন যাত্রী নিয়ে আশুগঞ্জের চরসোনারামপুর ঘুরতে যায় প্রমোদ তরীটি। সন্ধা আনুমানিক ৬ টার সময় নদীর তীরে পৌছার আগ মুহুর্তে পেছন থেকে আসা বালুবাহী একটি বাল্কহেড তরীটিকে ধাক্কা দিলে মুহুর্তেই তা ডুবে যায়। এ সময় স্থানিয়দের সহায়তা ১৩ জন সাতরিয়ে তীরে আসতে পারলেও নিখোঁজ হয় আরো ৮ জন। এদের মধ্যে ভৈরব হাইওয়ে থানার কনষ্টবল সোহেল রানাসহ তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে। এ ছাড়াও আমলাপাড়া এলাকার এক হিন্দু পরিবারের তিনজন সহ অজ্ঞাত আরো একজন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ এর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালায়। আজ শনিবার দুপুর একটার দিকে নদীর তলদেশ থেকে ডুবন্ত নৌকাটিসহ এর ভেতর থেকে পুলিশের স্ত্রী ও তার কন্যার মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দলের সদস্যরা।

নিখোঁজ অনিকার বান্ধবী রুবা জানান, আমরা চর থেকে ঘুরে নদীর প্রায় তীরবর্তী এসে পড়েছিলাম। তখন আমাদের তরীর কয়েকটা মেয়ে মাঁিঝকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের ছবি তুলে দিতে। মাঁঝি বৈঠা ছেড়ে দিয়ে মেয়েদের ছবি তুলে দিচ্ছিল। তরীটি তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এলো পাতাড়ী ঘোরতে থাকে। এ সময় পেছন থেকে একটি বড় ট্রলার আসছিল। মাঁিঝ তখন তরীটিকে নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করলেও ততক্ষনে ট্রলারটি আমাদের তরীর পেছনে ধাক্কা দেয়। মুহুর্তেই তরীটি ডুবে যায়। আমি সাতার জানতাম বলে সাতরিয়ে তীরে উঠতে পারলেও আমার বান্ধবী সাতার না জানায় সে আর তীরে উঠতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে তাকে আর খূজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

নিখোঁজের স্বজন রত্না বেগম জানান, আমাদের পাশের বাড়ির ৭ জন নৌকায় ছিল। ৪ জন উদ্ধার হয়েছে। তবে আরদ্দা, বেলাল মিয়া ও একজন মহিলাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

নিখোঁজ আনিকার চাচা রুবেল মিয়া জানান, আমার ভাতিজি আনিকা ও তার বান্ধবী রুবা বিকালে ব্রীজের নিচে ঘুরতে আসে। পরে ট্রলারের ধাক্কায় ভ্রমণ তরীটি ডুবে যায়। ভাতিজির বান্ধবী রুবা বেঁচে গেলেও আনিকাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আজিজুল হক রাজন বলেন, একটি বালু বাহি বলগেট এর সাথে ভ্রমণ তরীর ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। এতে ২০ জন ডুবে গেলে ১২ জন কে উদ্ধার করা হয়। এ সময় পানিতে তলিয়ে গিয়ে ৮ জন নিখোঁজ হয়। পরে এক অজ্ঞাত ১ নারীর লাশ উদ্ধার করার কয়েক ঘন্টা পর জানা যায় তার নাম সুবর্ণ। তার বাড়ি শহরের কমলপুর এলাকায়। গতকাল এ ঘটনার পর পর অন্ধকার নেমে আসায় উদ্ধার কাজ স্থগিত ছিল। আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে আবারো উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে।

ভৈরব-আশুগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আজ সকালে নারায়নগঞ্জ থেকে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য নারায়নগঞ্জ থেকে ডুবুরী দল এসে আমাদের সাথে উদ্ধার কাজে যুক্ত হয়েছে। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রাশেল শেখ বলেন, খুবই মর্মান্তি এ ঘটনা। নৌকা ডুবির ঘটনায় পুলিশ সদস্যের স্ত্রী ও তার মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদেরও উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। যতক্ষন না সাবইকে উদ্ধার করা না হয় সেপর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস, নৌপুলিশ, বিআইডব্লিউটিএসহ স্থানিয় সকল প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত থেকে উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছেন। ডুবন্ত নৌকাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। আশা করছি কিছুক্ষনের মাঝেই সেটিও উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বালিয়াডাঙ্গীতে ইসতিসকার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত

ভৈরবে নৌকা ডুবির ঘটনায় ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার : নিখোঁজ ৬

আপডেট সময় ১০:৪৩:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

মোঃ ওয়াহিদ, কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাল্কহেডের ধাক্কায় প্রমোদ তরী ডুবে যাওয়ার ঘটনায় তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দলের সদস্যরা। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরো ৬জন।

নিহতরা হলেন, শহরের কমলপুর এলাকার সুবর্ণা ও পুলিশের কন্সটেবল সোহেল রানার স্ত্রী মৌসুমি (২৫) ও মেয়ে মাহমুদা (৭)।

নিখোঁজরা হলেন, পুলিশের কনষ্টবল সোহেল রানা ও ছেলে রায়সুল (৫), শহরের নিউটাউন এলাকার আরাদ্দা, বেলাল দে, কটিয়াদী উপজেলার চান্দ্পুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বেলুন চন্দ্র দে, নরসিংদীর রায়পুরা এলাকার আনিকা আক্তার। গতকাল সন্ধা আনুমানিক ৬ টার সময় ভৈরব মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ১৮ ঘন্টা পর পুলিশ কনষ্টবলের স্ত্রী ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেন বিআইডব্লিউটিএ এর ডুবুরি দল।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গতকাল শুকবার সন্ধা অনুমানিক ৬ টার সময় মেঘনা নদীতে নৌকা নিয়ে নারী পুরূষ ও শিশুসহ ২১ জন যাত্রী নিয়ে আশুগঞ্জের চরসোনারামপুর ঘুরতে যায় প্রমোদ তরীটি। সন্ধা আনুমানিক ৬ টার সময় নদীর তীরে পৌছার আগ মুহুর্তে পেছন থেকে আসা বালুবাহী একটি বাল্কহেড তরীটিকে ধাক্কা দিলে মুহুর্তেই তা ডুবে যায়। এ সময় স্থানিয়দের সহায়তা ১৩ জন সাতরিয়ে তীরে আসতে পারলেও নিখোঁজ হয় আরো ৮ জন। এদের মধ্যে ভৈরব হাইওয়ে থানার কনষ্টবল সোহেল রানাসহ তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে। এ ছাড়াও আমলাপাড়া এলাকার এক হিন্দু পরিবারের তিনজন সহ অজ্ঞাত আরো একজন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ এর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালায়। আজ শনিবার দুপুর একটার দিকে নদীর তলদেশ থেকে ডুবন্ত নৌকাটিসহ এর ভেতর থেকে পুলিশের স্ত্রী ও তার কন্যার মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দলের সদস্যরা।

নিখোঁজ অনিকার বান্ধবী রুবা জানান, আমরা চর থেকে ঘুরে নদীর প্রায় তীরবর্তী এসে পড়েছিলাম। তখন আমাদের তরীর কয়েকটা মেয়ে মাঁিঝকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের ছবি তুলে দিতে। মাঁঝি বৈঠা ছেড়ে দিয়ে মেয়েদের ছবি তুলে দিচ্ছিল। তরীটি তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এলো পাতাড়ী ঘোরতে থাকে। এ সময় পেছন থেকে একটি বড় ট্রলার আসছিল। মাঁিঝ তখন তরীটিকে নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করলেও ততক্ষনে ট্রলারটি আমাদের তরীর পেছনে ধাক্কা দেয়। মুহুর্তেই তরীটি ডুবে যায়। আমি সাতার জানতাম বলে সাতরিয়ে তীরে উঠতে পারলেও আমার বান্ধবী সাতার না জানায় সে আর তীরে উঠতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে তাকে আর খূজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

নিখোঁজের স্বজন রত্না বেগম জানান, আমাদের পাশের বাড়ির ৭ জন নৌকায় ছিল। ৪ জন উদ্ধার হয়েছে। তবে আরদ্দা, বেলাল মিয়া ও একজন মহিলাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

নিখোঁজ আনিকার চাচা রুবেল মিয়া জানান, আমার ভাতিজি আনিকা ও তার বান্ধবী রুবা বিকালে ব্রীজের নিচে ঘুরতে আসে। পরে ট্রলারের ধাক্কায় ভ্রমণ তরীটি ডুবে যায়। ভাতিজির বান্ধবী রুবা বেঁচে গেলেও আনিকাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আজিজুল হক রাজন বলেন, একটি বালু বাহি বলগেট এর সাথে ভ্রমণ তরীর ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। এতে ২০ জন ডুবে গেলে ১২ জন কে উদ্ধার করা হয়। এ সময় পানিতে তলিয়ে গিয়ে ৮ জন নিখোঁজ হয়। পরে এক অজ্ঞাত ১ নারীর লাশ উদ্ধার করার কয়েক ঘন্টা পর জানা যায় তার নাম সুবর্ণ। তার বাড়ি শহরের কমলপুর এলাকায়। গতকাল এ ঘটনার পর পর অন্ধকার নেমে আসায় উদ্ধার কাজ স্থগিত ছিল। আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে আবারো উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে।

ভৈরব-আশুগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আজ সকালে নারায়নগঞ্জ থেকে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য নারায়নগঞ্জ থেকে ডুবুরী দল এসে আমাদের সাথে উদ্ধার কাজে যুক্ত হয়েছে। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রাশেল শেখ বলেন, খুবই মর্মান্তি এ ঘটনা। নৌকা ডুবির ঘটনায় পুলিশ সদস্যের স্ত্রী ও তার মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদেরও উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। যতক্ষন না সাবইকে উদ্ধার করা না হয় সেপর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস, নৌপুলিশ, বিআইডব্লিউটিএসহ স্থানিয় সকল প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত থেকে উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছেন। ডুবন্ত নৌকাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। আশা করছি কিছুক্ষনের মাঝেই সেটিও উদ্ধার করা সম্ভব হবে।